জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে আজ বুধবারও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে সাঁওতালরা। তারা মিছিলে শ্লোগান দেয়, জীবন দিব, তবু রক্তেভেজা জমি ছাড়বো না। ইপিজেডের জন্য আজ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ এলাকায় বেপজার জড়িপ করার খবর শুনে সাঁওতালরা এই কর্মসুচি পালন করে। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে তারা ব্যানার ফেষ্টুন তির ধনুক হাতে উপজেলার কাটামোড় এলাকায় অবস্থান নেয়। এদিকে সাঁওতালদের বিক্ষোভ কর্মসুচি দেখে বেপজার জড়িপ কাজ সম্পন্ন হয়নি।
এরআগে সাঁওতালরা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতালপল্লী মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে মিছিল নিয়ে কাটামোড়ে আসেন। এখান থেকে বাগদা বাজার পর্যন্ত কয়েক দফা তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে গোবিন্দগঞ্জ-দিনাজপুর সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এরপর কাটামোড় এলাকায় এবং সাহেবগঞ্জ আমবাগানে পৃথক সমাবেশ করে। সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত তারা কাটা মোড়ে অবস্থান করে। এতে তির-ধনুক, ফেস্টুন ও ব্যানার হাতে তিন শতাধিক সাঁওতাল নারী-পুরুষ অংশ নেন। কর্মসূচির আয়োজন করে গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি।
বক্তব্য দেন সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে ও সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন শেখ, সাঁওতাল নেতা প্রিসিলা মুরমু, মিথাইল মুরমু, হার্ডিয়াস মুরমু, মিসথেরিনা মুরমু, গাইবান্ধা সামাজিক সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবির প্রমুখ। বক্তারা বলেন, তাদের সঙ্গে বেপজার লোকজন কোনো আলোচনা করেনি। বেপজা নিজেরাই ইপিজেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরার জন্য ব্যবস্থার দাবি জানান। বক্তারা তিন সাঁওতাল হত্যার বিচারসহ সাহেবগঞ্জ এলাকায় তাঁদের বাপ-দাদার জমিতে প্রস্তাবিত ‘রংপুর ইপিজেড’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের সাঁকোয়া বিল এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের দাবি জানান। যার প্রস্তাবনা সাবেক জেলা প্রশাসক ড. কাজী আনোয়ারুল হক ২০১২ সালে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছেন। তারা বলেন, বেপজা সাঁকোয়া বিল এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের প্রস্তাবনা ধামাচাপা দিয়ে বাগদাফার্ম এলাকার তিন ফসলি জমি গ্রাসের জন্য চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জে অবস্থিত রংপুর চিনিকল সূত্র জানায়, উপজেলার অন্তর্গত সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় রংপুর চিনিকলের আওতায় ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আছে। এই জমিতে উৎপাদিত আখ রংপুর চিনিকলে মাড়াই হতো। একসময় সাঁওতালরা এসব জমি দখল করে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ এসব জমিতে উচ্ছেদের উদ্দেশ্যে গেলে সাঁওতালদের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল শ্যামল হেমব্রম, রমেশ টুডু ও মঙ্গল মার্ডি নিহত, অন্তত ২০ জন আহত হন। এরপর থেকে সাঁওতালরা দফায় দফায় এই জমি দখল করেন। জমি উদ্ধারে গঠিত হয় সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি। এ পরিস্থিতিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা) সাহেবগঞ্জ বাগদা ফার্ম এলাকায় তিন ফসলি জমিতে ইপিজেড স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু স্থানীয় সাঁওতালরা এখানে ইপিজেড না করার জন্য আন্দোলন করছেন।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি