জেলা প্রতিনিধি, গাইবান্ধা :
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহনের দাবিতে মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) আধাবেলা হরতাল পালিত হয়েছে। সকাল ছয়টা থেকে দুপুর দুইটা পযন্ত এই হরতাল পালিত হয়। হরতাল চলাকালে মহিমাগঞ্জ বাজারের সকল দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল।
এসময় মহিমাগঞ্জ চৌমাথা মোড়ে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে হরতাল সমর্থকরা। দুপুর ১২টার দিকে হরতালের সমথনে একটি মিছিল মহিমাগঞ্জের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। গত রোববার অনুষ্ঠিত নিবাচনে ওই ইউনিয়নের সিংজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ঘোষিত ফলাফল বাতিলসহ কেন্দ্রটিতে পুণরায় ভোট গ্রহণের দাবিতে পরাজিত তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ডাকে এসব কমসুচি পালিত হয়। প্রার্থীরা হচ্ছেন মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্সি রেজওয়ানুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কাদির ও রুবেল আমিন। গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইজার উদ্দিন বলেন, হরতালে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সকাল থেকেই মহিমাগঞ্জ এলাকায় পুলিশ টহল জোরদার করা হয়।
মিছিল শেষে মহিমাগঞ্জ চৌমাথা মোড়ে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেন, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী মুন্সি রেজওয়ানুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কাদির ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক হামিদুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বলেন, গত রোববার (২৬ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের সিংজানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। তাই কেন্দ্রটি ঘোষিত ফলাফল বাতিল করাসহ পুনরায় ভোটগ্রহণ করতে হবে।
তারা আরও বলেন, সিংজানি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কোনো এজেন্টকে থাকতে দেওয়া হয়নি। সকাল ১০টার পর কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাসহ ভোটগ্রহণে দায়িত্বরতদের সহায়তায় প্রভাব বিস্তার করে ব্যালট পেপারে সিল মারেন বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম প্রধানসহ তার লোকজন। এ কারণে কেন্দ্রটিতে অন্যান্য প্রার্থীদের প্রতীকে কম ভোট দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় উপজেলা রিটার্নিং কমকতা বরাবরে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।
সমাবেশে আওয়ামী লীগের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মুন্সি রেজওয়ানুর রহমান অভিযোগ করেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ প্রধানের গ্রামের বাড়ি মহিমাগঞ্জে। তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় তাঁর পরাজয় ঘটে। বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ। তিনি বলেন, দলীয় প্রাথীর আচরণগত সমস্যা ও নির্বাচনের আগে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদশন করার কারণে তাঁর পরাজয় ঘটেছে।
একই বিষয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম প্রধান বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশেই মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। জনগণের ভোটেই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ পরাজিত প্রার্থীরা মনগড়া নানা অভিযোগ করাসহ মহিমাগঞ্জের শান্তিপ্রিয় পরিবেশে অশান্তি তৈরির পায়তারা করছেন। অযৌক্তিক এই হরতালে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের জনসাধারণের কোন সমর্থন নেই।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কমকতা (ইউএনও) আবু সাঈদ বলেন, অতীতে উপজেলার ইউনিয়নগুলোর নির্বাচন দুই ধাপে সম্পন্ন হলেও এবার ১৬টি ইউনিয়নে একধাপেই নির্বাচন হয়েছে। প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভুমিকার কারণে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে। মহিমাগঞ্জের ওই কেন্দ্রেও কোনো সমস্যঅ হয়নি।
উপজেলা নির্বাচন কমকতার কার্যালয় সুত্র জানায়, চতুর্থ ধাপে মহিমাগঞ্জসহ গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে বিছিন্ন ঘটনার মধ্যদিয়ে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের নয়টি কেন্দ্রের ফলাফল অনুযায়ী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম প্রধান ৭ হাজার ৩১৪ ভোট পেয়ে বে-সরকারিভাবে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। প্রতিদ্বন্দ্বী অপর তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কাদির ৬ হাজার ৫৫১, আওয়ামী লীগের মুন্সি রেজওয়ানুর রহমান ৫ হাজার ৩০৯ ও রুবেল আমিন ৪ হাজার ৬৯৬ ভোট পান।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি