November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, March 6th, 2022, 7:55 pm

গাইবান্ধায় রেশম পোকা পালনে তিন উপজেলায় ৪৫০ নারী স্বাবলম্বী

ফেরদৌস জুয়েল, গাইবান্ধা :

গাইবান্ধার তিন উপজেলায় রেশম পোকা পালনে প্রায় ৪৫০ জন নারী স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা সংসারের চাহিদা মেটানোর পরও বাড়তি উপার্জন করছেন। অভাব আর তাদের দুয়ারে হানা দিতে পারে না। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এসব স্বাবলম্বী নারীদের সহায়তা প্রদান করছে।

সুন্দরগঞ্জ রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর ও পলাশবাড়ী উপজেলায় রেশম পোকার চাষ শুরু হয়। এসব উপজেলার প্রায় ৪৫০ জন নারী রেশম পোকা পালনে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এরমধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২০০ জন, সাদুল্লাপুরে ১৫০ জন ও পলাশবাড়ীতে ১০০ জন। রেশম পোকার খাদ্য হিসেবে তিনটি উপজেলায় প্রায় ৩৬ হাজার তুঁত গাছ লাগানো হয়। তুঁত গাছের ডাল রোপণের একবছর পর তুঁত পাতা সংগ্রহ করা যায়। রেশম পোকা তুঁত পাতা ছাড়া অন্য কোন খাদ্য গ্রহন করেনা।

সুত্রটি জানায়, রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র রংপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর, কুমিল্লা ও ঝিনাইদহ থেকে রেশম পোকার ডিম গাইবান্ধায় নিয়ে আসছে। পরে এসব ডিম বিনামূল্যে নারীদের দেওয়া হয়। এ ছাড়া পোকা পালনে তাদেরকে বিনামূল্যে ১৪ হাত দৈর্ঘ্য ও ৯ হাত প্রস্থের একটি টিনশেড ঘরও তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই ঘরে তারা রেশম পোকা পালন করেন। পোকা থেকে উৎপাদিত গুটি লালমনিরহাট, জয়পুরহাট, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, ঝিনাইদহসহ মোট ১২টি ক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব ক্রয়কেন্দ্রে রেশম গুটি থেকে সুতা তৈরি করা হয়। পরে সেই সুতা পাঠানো হয় রাজশাহী ও ঠাকুরগাঁওয়ের কারখানায়। ওইসব কারখানায় টুপিস, থ্রিপিস, ওড়না, শাড়ী, চাদরসহ বিভিন্ন পোশাক তৈরি হয়। পরে সেই সব পোশাক সারাদেশে বিক্রি হয়।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের ফতেহখঁা গ্রামের আয়েশা সিদ্দিকার (৩৮) বাড়ি। স্বামী সাকা মিয়া দিনমজুর। পাঁচশতক বসতভিটা ছাড়া কোনো সম্পদ নেই। একমাত্র মেয়ে শাহাজাদি দশম ও ছেলে রাতিকুল ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্বামীর আয়ে ঠিকমত সংসার চলেনা। উপরন্ত পড়াশোনার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হয়। সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের সহায়তায় তিনি রেশম পোকা পালন শুরু করেন। চারবছর ধরে কোন খরচ ছাড়াই পোকা পালন করছেন। রেশমের গুটি তৈরি করছেন পোকা থেকে। আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, এসব গুটি বিক্রি করে বার্ষিক ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা আয় করছেন। অভাব আর সংসারে হানা দিতে পারে না।

ফতেহখঁা গ্রামের আরেক গৃহবধু মিলি বেগম (৩২)। এক ছেলে সাফায়াত (৪) ও মেয়ে ফারহানাকে (৬) নিয়ে চারজনের সংসার।তাঁর স্বামী সৈয়দ ফেরদৌস হাসান। তিনি মানসিক রোগি। ঠিকমত সবকাজ করতে পারেন না। মা মেয়ে মুদি দোকান চালান। দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। দুইবছর ধরে রেশম পোকা পালন শুরু করেন। মিলি বেগম বলেন, মুলধন ছাড়া শুধু শ্রম দিয়েই প্রতিবছর ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা বাড়তি আয় করছেন। সোনারায় ইউনিয়নের পশ্চিম বৈদ্যনাথ গ্রামের হাজেরা বেগম (৫২) বলেন, তাঁর স্বামী গনি মিয়া রিকশা-ভ্যান চালান। ছেলে হাফিজারও (২৪) রিকশা-ভ্যান চালান। হাফিজার বিয়ে করে আলাদা থাকেন। মেয়ে শাপলাকে বিয়ে দিয়েছেন। বসতভিটা চার শতাংশ জমি ছাড়া আর কোন জমি নেই। হাজেরা বেগম বলেন, রেশম পোকা পালন করে ছয় শতশ জমি কিনেছেন। সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। প্রতিবছর ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা আয় করছেন।

এসব গাছ পরিচর্যা করে আরও ২৪ জন নারীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এসব নারী প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন। সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মনমথ গ্রামের বন্দনা রানী (৫০) বলেন, তুঁত গাছের পরিচর্যা করে মাসে মাসে টাকা পাচ্ছেন। ফলে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে। আবার তুঁত গাছের ডাল রান্নায় জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করায় জ্বালানী ব্যয়ও কমেছে।

এসব বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক (সম্প্রসারণ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, দারিদ্রতা দুর করতে গাইবান্ধার তিনটি উপজেলায় রেশম পোকা পালনে নারীদের উদ্ধুদ্ধ করছে রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্র। সুবিধাভোগিদের বিনামুল্যে ঘর নিমার্ণ, ডিম সরবরাহ ও তুঁত পাতার যোগান দেওয়া হচ্ছে। তারা কেবল শ্রম দিয়েই লাভবান হচ্ছেন। ভবিষ্যতে সারা জেলায় এই কার্যক্রম ছড়িয়ে দেওয়া হবে।