আব্দুর বারী স্বপন, রংপুর (গঙ্গাচড়া):
গঙ্গাচড়ায় গাছ লাগানোর জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাহিদ তামান্না ও সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) নয়ন কুমার সাহার উদ্যোগে অক্সিজেন রোড নাম দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাতিক্রম নামটি নিয়ে এলাকায় আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ মহতি উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণ কোলকোন্দ ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ড সীমানা রাস্তায় প্রায় ৩০ ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে। মেইন রাস্তা হতে মধ্যপাড়া যেতে হয় ওই রাস্তা দিয়ে। প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য রাস্তাটি সবুজ ফসলের মাঠ দিয়ে আঁকা-বাঁকা হয়ে মধ্যপাড়া গেছে। সে রাস্তা জুড়ে ফলজ, বনজ, ওষধি, ফুল ও পুষ্টি জাতীয় গাছ লাগানো হয়। নিরাপদে বেড়ে উঠার জন্য গাছের চারাগুলোকে জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের প্রত্যেকে একটি করে গাছের চারা লাগানোর জন্য ডাকা হয় এবং তাদের প্রত্যেকে একটি করে গাছের চারা দেওয়া হয় লাগানোর জন্য। যারা যে গাছটি লাগিয়েছে সেটির যত্ন সে নিবে এবং ওই গাছের সুফল সে পাবে। এভাবে গাছ সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। গাছ লাগাতে শিশুসহ সব বয়সের অংশ নেওয়া মানুষের মাঝে আনন্দের কোন কমতি ছিলনা। এছাড়া কত ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে ও কোন গাছের কি গুনাগুন সে সম্পর্কে সাইন বোর্ড লাগানো হয়েছে। রাস্তায় ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন খালি না থাকে’ প্রধানমন্ত্রীর ছবিসহ এ ঘোষনার সাইনবোর্ড। রাস্তার প্রবেশের দুই মাথায় অক্সিজেন রোড লেখা সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহার পরিকল্পনায় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্নার দিক নির্দেশনায় এ ব্যাতিক্রম নামে গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। দক্ষিণ কোলকোন্দ মধ্যপাড়ার মোঃ তাহেরুল ইসলাম, চান মিয়া, আব্দুল জলিল বলেন, আগে কখনও শুনি নাই রাস্তায় গাছ লাগিয়ে অক্সিজেন রোড নাম রাখে। গাছ মানুষের কত প্রয়োজন তা এবার আরো ভাল করে বুঝতে পারলাম। এ উদ্যোগ গ্রহনকারীদের ধন্যবাদ জানাই আমাদের এলাকায় এমন ব্যাতিক্রম নামে গাছ রোপন করার জন্য। শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবী রায়হান কবির জানায়, সত্যি এমন উদ্যোগ আনন্দের। আমি এ মহতি উদ্যোগের গল্প আমার কাজের মাধ্যমে সব শ্রেনী পেশার মানুষ ও বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিবো যাতে তারাও নিজেরা গাছ লাগায়। ইউপি সদস্য শরিফুল ইসলাম বলেন, গাছ যে হারে কাটা হয় সে হারে লাগানো হয় না। সরকার গাছ কাটার আগে গাছ লাগানোর কথা বলছে।
কিন্তু তারপরও কাটার তুলনায় বেশী। এ উদ্যোগে গাছ লাগানোর গুরুত্বটা বাড়বে, কারণ অক্সিজেন রোডের মাধ্যমে গাছের গুনাগুনটা এখন সহজে জানতে পারবে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, সরকার পরিবেশ রক্ষায় গাছ ঢালাওভাবে কাটতে নিরুৎসাহিত করছে, কেউ প্রয়োজনে গাছ কাটলে তাকে আরেকটা গাছ লাগাতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু সেটা কেউ ঠিকভাবে মানছেনা। এছাড়া বিভিন্ন মিল কারখানার কালো ধুয়া যেভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে এবং গাছ ধ্বংসের কারনে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।
পরিবেশ বান্ধব দেশ গড়তে হলে গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। আর সুস্থ্য জীবনের জন্য চাই নিরাপদ অক্সিজেন, পুষ্টি, ওষুধ এবং নানা ফুল-ফল। মানুষজনকে এটা বুঝা হবে। তাই আমি ইউএনও স্যারের দিক নির্দেশনায় এ পরিকল্পনা গ্রহন করি। উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদ তামান্না বলেন, মানুষকে বাঁচতে হলে প্রথম তার দরকার অক্সিজেন। সেটা গাছ দেয়। এছাড়া পরিবেশ রক্ষায় গাছের বিকল্প নেই। তাই আমি এসিল্যান্ডকে দিক নির্দেশনা দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহন করতে বলি। সে মোতাবেক মানুষজনকে সম্পৃক্ত করে রাস্তায় গাছ লাগানোর কাজ শুরু করি। যার নাম দেওয়া হয় অক্সিজেন রোড। এ নামটা দেওয়ার কারনেই মানুষ গাছের গুরুত্বটা বুঝতে পারবে এবং গাছ লাগাবে। ফলে পরিবেশ রক্ষায় সরকারের মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়নে এগিয়ে যাবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি