অনলাইন ডেস্ক :
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি মা ও শিশুদের জন্য একটি ‘দুঃস্বপ্ন’। সেখানে ছোট এবং অসুস্থ নবজাতক জন্ম নিচ্ছে। মৃতশিশু প্রসবসহ পর্যাপ্ত অ্যানেস্থেসিয়া ছাড়াই সিজার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন নারীরা। গাজার ডাক্তারদের বরাত দিয়ে শুক্রবার এসব তথ্য জানিয়েছেন জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা। এদিকে গাজায় এক বাড়িতে হামলা চালিয়ে ৩৬ জনকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) প্রতিনিধি ডমিনিক অ্যালেন জেরুজালেম থেকে এক ভিডিও সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে চলতি সপ্তাহে আমি গাজা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। এখানকার ১০ লাখ নারী এবং কিশোরীর জন্য আমি আতঙ্কিত।
প্রতিদিনই এখানে ছোট ও অসুস্থ নবজাতক জন্ম নিচ্ছে, যা আমাদের সকলের জন্যই এক ভয়াবহ খবর। অ্যালেন বলেছেন, ‘ডাক্তাররা জানিয়েছেন, তারা এখন আর কোনো স্বাভাবিক আকারের শিশু জন্ম নিতে দেখছেন না। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, তারা যা দেখেছেন তা হলো আরো বেশি মৃত শিশুর জন্ম। আরো বেশি নবজাতকের মৃত্যু। এসবের কিছু ঘটছে অপুষ্টি, ডিহাইড্রেশন এবং কিছু জন্মকালীন জটিলতার জন্য।’ প্রসবকালীন জটিলতায় ভোগা নারীর সংখ্যা গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগের সংখ্যার চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। সেখানকার মায়েরা অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ভয়, অপর্যাপ্ত খাবার এবং ক্লান্ত অনুভব করেন। সেখানে তাদের সেবাদানকারীরা প্রায়ই প্রয়োজনীয় সরবরাহের অভাব থাকার কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, সিজারের জন্য ‘আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অ্যানেস্থেসিয়া নেই, যা অচিন্তনীয়’। তিনি আরো বলেছেন, ‘ঐ শিশুদের মায়ের বাহুডোরে জড়িয়ে থাকার কথা, তাদের দেহ ব্যাগে মোড়ানোর কথা নয়।’ অ্যালেন বলেছেন, কিছু ইউএনএফপিএ এর ধাত্রীদের জন্য প্রসবকালীন কিট এবং ফ্ল্যাশলাইট ও সোলার প্যানেলের মতো সরবরাহ প্রবেশের অনুমতি দিতে অস্বীকার করেছিল ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেছিলেন, ‘এটি একটি দুঃস্বপ্ন যা মানবিক সংকটের চেয়েও অনেক বেশি কিছু। এটি মানবতার সংকট বিপর্যয়ের ঊর্ধ্বে।’ গাজায় গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় যে চিত্র তিনি দেখেছিলেন সে সম্পর্কে অ্যালেন বলেছিলেন, তা দেখে ‘সত্যিই আমার হৃদয় ভেঙে গেছে।’ তখন তিনি যাকেই অতিক্রম করেছেন বা যার সঙ্গেই কথা বলেছেন, অ্যালেনের বক্তব্যে, তারা ‘অসহায়, নরকঙ্কাল ও ক্ষুধার্ত’ এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রতিদিনের সংগ্রামে ক্লান্ত ছিলেন।
৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালিয়েছিল। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মতে, ঐ হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরাইলি নিহত হন। ঐ হামলার প্রতিক্রিয়ায় ঐ দিনই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আকাশ ও স্থলপথে পালটা হামলা শুরু করে ইসরাইল। ঐ দিনের শুরু করা হামলা টানা পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
খাদ্যের তীব্র সংকটের মধ্যেই অঞ্চলটির প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দাই অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এদিকে মধ্য গাজায় একটি বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এতে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়েছেন। ঐ বাড়িটি নুসিরাত শরণার্থী ক্যাম্প থেকে বেশি দূরে নয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলায় একটি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। নিতহদের মধ্যে শিশু রয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রাফায় সেনাবাহিনীকে অভিযানের অনুমোদন দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে ইসরাইলকে সতর্ক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু