অনলাইন ডেস্ক :
ইসরায়েলের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে বাড়িঘর ছেড়ে গাজা ভূখন্ডে জাতিসংঘের জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষ অবস্থান নিয়েছে। ‘ইউনাইটেড নেশনস রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি’ (ইউএনআরডব্লিউএ) সোমবার জানায়, তাদের ৮৩টি স্কুলকে আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে। স্কুলগুলোর চেয়ার-টেবিল সরিয়ে বিছানা পাতা হয়েছে। মোট আশ্রয়কেন্দ্রের ধারণক্ষমতার ৯০ শতাংশই পূর্ণ হয়ে গেছে। এদিকে গাজায় রক্তপাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছে উত্তর কোরিয়া। গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দাদের আশ্রয় নেওয়া জাতিসংঘের একটি স্কুল সরাসরি ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়। এর বেশি কিছু জানায়নি ইউএনআরডব্লিউএ।
ঐ আক্রমণের সময় স্কুলটিতে কতজন মানুষ ছিল, সেটিও জানা যায়নি। মুহুর্মুহু আক্রমণের মুখে বাধ্য হয়ে ১৪টি খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কেন্দ্র বন্ধ করা হয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ইউএনআরডব্লিউএ লিখেছে। ফলে ৫ লাখ মানুষের খাদ্যসহায়তা পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। শনিবার ভোরে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের আকস্মিক হামলায় স্তম্ভিত হয়ে যায় ইসরাইল। এরপর পালটা আক্রমণ শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। পালটাপালটি সহিংসতায় উভয়পক্ষের মোট দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
ইসরাইলি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো জানিয়েছে, হামাসের হামলায় নিহত ইসরাইলির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯০০ জনে আর আহত হয়েছে অন্তত ২ হাজার ৬০০ জন; এ ছাড়া আরো বহু জনকে ধরে নিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে। অপরদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলের আক্রমণে এখন পর্যন্ত ৬৮০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি। গাজার যেসব স্থাপনায় হামলা চালানো হয় সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক, একটি মসজিদ ও হাসপাতালও আছে; এর পাশাপাশি কিছু সড়ক ও বাড়িও ধ্বংস হয়েছে।
ইসরাইল বেসামরিক ফিলিস্তিন টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির সদর দপ্তরেও বোমাবর্ষণ করেছে। এতে গাজার ল্যান্ড টেলিফোন, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজায় ইসরায়েলের হামলা সোমবার রাতেও অব্যাহত ছিল। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা আকাশ ও সাগর থেকে গাজা ভূখন্ডের বিভিন্ন লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে, এগুলোর মধ্যে ইসলামিক জিহাদের একটি অস্ত্রাগার ও গাজার উপকূলে হামাসের কিছু স্থাপনা ছিল। হামাসের মুখপাত্র আবু উবাইদা সোমবার হুমকি দিয়ে বলেছেন, সতর্কতা ছাড়া গাজার প্রত্যেক বেসামরিক বাড়িতে বোমা হামলা চালানোর জন্য একজন করে ইসরাইলির বন্দির মৃত্যুদ- কার্যকর করে তা সম্প্রচার করা হবে। এই হুমকির বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।
এদিকে ফিলিস্তিনের গাজায় রক্তপাতের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করছে উত্তর কোরিয়া। জানা গেছে, উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির মুখপাত্র রোডং সিনমুন পত্রিকা বিদেশি মিডিয়ার বরাত দিয়ে সংঘাত ও হতাহতের বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দাবি করে, এই সংঘর্ষ ফিলিস্তিনির জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের ক্রমাগত অপরাধমূলক কর্মকা-ের ফল এবং এর সমাধানের মৌলিক উপায় হলো একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ে তোলা। চলমান সংঘাতে হামাসের রকেট হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র দৃঢ়ভাবে ইসরাইলি সরকারের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইরান ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনিদের এ হামলাকে সমর্থন করেছে। ইরাক, ইয়েমেন ও জর্ডানে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে মিছিল হয়েছে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু