অনলাইন ডেস্ক :
জ্বালানির ফুরিয়ে যাওয়ায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত গাজার হাসপাতালে ইনকিউবেটরে থাকা অন্তত ১২০ নবজাতকের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা গতকাল রোববার সতর্ক করে এ তথ্য জানিয়েছে। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় ইতোমধ্যে এক হাজার ৭৫০-এরও বেশি শিশু নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে শুধু হাজার হাজার আহতের জন্যই নয়, নিয়মিত রোগীদের জন্যও ওষুধ, জ্বালানি ও পানির মারাত্মক অভাবের মুখোমুখি হাসপাতালগুলো। ইউনিসেফের মুখপাত্র জোনাথন ক্রিকক্স বলেছেন, ‘বর্তমানে ইনকিউবেটরে ১২০ জন নবজাতক রয়েছে। এদের মধ্যে ৭০ জন নবজাতকের যান্ত্রিক শ্বাসযন্ত্র প্রয়োজন। অবশ্যই আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’ হামাসের হামলার পর ইসরায়েল এই অঞ্চলটি সম্পূর্ণ অবরোধের নির্দেশ দেয়।
ইসরায়েল আশঙ্কা করছে,জ্বালানি হামাসকে সাহায্য করতে পারে। গাজাজুড়ে সাতটি বিশেষজ্ঞ ওয়ার্ডের জন্য এখন জ্বালানি একটি প্রধান উদ্বেগ, যা প্রি-ম্যাচিউর শিশুদের শ্বাস-প্রশ্বাসে সহায়তাসহ অন্যান্য গুরুতর সহায়তা প্রদান করে। ব্যাপক বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) বৃহস্পতিবার সতর্ক করেছে বলেছিল, হাসপাতালগুলোতে ইতোমধ্যে জেনারেটরের জন্য জ্বালানি শেষ হয়ে গেছে। ডাব্লিউএইচওর মতে, জেনারেটর বন্ধ হয়ে গেলে ডায়ালিসিসের প্রয়োজন-এমন প্রায় এক হাজার মানুষও ঝুঁকিতে পড়বে।
গত শনিবার মিসর থেকে ২০টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করলেও চালানটিতে কোনো জ্বালানি ছিল না। ইউনিসেফের মুখপাত্র বলেছেন, বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিলে ইনকিউবেটরে রাখা শিশুদের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে। জ্বালানির অভাবে ১৩০টি প্রি-ম্যাচিউর শিশু মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার ্জানিয়েছে। এদিকে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল অনুসারে, গাজায় প্রতিদিন প্রায় ১৬০ জন নারী সন্তান প্রসব করেন। সেই হিসাবে, ২৪ লাখ জনসংখ্যার অঞ্চলে ৫০ হাজার গর্ভবতী নারী রয়েছে। যদিও ইসরায়েল বলেছে, তাদের হামলা হামাসকে লক্ষ্য করে, যারা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েলের সৃষ্টির পর থেকে সবচেয়ে মারাত্মক হামলা চালিয়েছে। তবে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় চার হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে, যার বড় একটি অংশই শিশু।
অবরুদ্ধ গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার জানিয়েছে, ইসরায়েলের চলমান বোমাবর্ষণের কারণে গাজায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে চার হাজার ৬৫১ জনে দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে এক হাজার ৮৭৩ শিশুও রয়েছে। পাশাপাশি আহতের সংখ্যা বেড়ে ১৪ হাজার ২৪৫ হয়েছে। এ ছাড়া ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে এক হাজার ২৩ জন নারী রয়েছে বলেও এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ কুদরা জানিয়েছেন। ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ ও অবরোধের মাধ্যমে গাজায় সংঘাত শুরু হয়েছিল। সেদিন হামাস গাজার সীমান্ত ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নজিরবিহীন হামলা চালায়। এরপর থেকে গাজায় ইসরায়েল প্রতিশোধমূলক হামলা চালাচ্ছে।
হামাসের হামলায় এখন পর্যন্ত এক হাজার ৪০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছে। এদিকে গাজা একটি ভয়ানক মানবিক সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে। সেখানে বিদ্যুৎ নেই। পানি, খাদ্য, জ্বালানি ও চিকিৎসা সরবরাহও শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গত শনিবার মিসর থেকে মানবিক ত্রাণবাহী ২০টি ট্রাক গাজা উপত্যকায় প্রবেশ করে। ৭ অক্টোবর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি ছিল গাজায় প্রথম সহায়তা বিতরণ। সূত্র : এএফপি ও আনাদোলু এজেন্সি
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২