অনলাইন ডেস্ক :
গাজায় দখলদার ইসরায়েল বাহিনীর একের পর এক হামলায় ইতোমধ্যে নিহতের সংখ্যা ২৫০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে ৮ হাজারের বেশি লোক, যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও নারী। এমন ভয়াবহ মানবিক সংকটে গাজাবাসী কোথায় যাবে তারও দিশা মিলছে না। ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় এমন অবস্থায় গাজার হাসপাতালগুলোতে বেড়েই চলেছে হাহাকার এবং ব্যথার আর্তনাদ। হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে থাকা হাজার হাজার আহত ফিলিস্তিনিকে নিয়ে চিকিৎসকরা দিশাহারা। কর্মীরা ব্যস্ত আহতদের রক্তমাখা টাইলস পরিষ্কারে। বাতাসে ছড়িয়ে পড়েছে ক্লোরিনের তীব্র গন্ধ। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নৃশংস হামলার নবম দিন চলছে আজ।
চোখেমুখে উদ্বেগ নিয়ে হাসপাতালের দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ওয়ালা আলাবাসি। তিনি সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে জানান, তারা ২১ বছর বয়সী ভাই সালেমের অবস্থা এখন কী তা জানেন না। ভাইয়ের খবর নিতে অপেক্ষা করছেন। চলতি সপ্তাহের শুরুতে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ইসরায়েলি বিমান হামলায় ওয়ালা আলাবাসির ভাইয়ে আহত হন। যার ফলে তার পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আলাবাসি বলেন, ‘অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ডাক্তাররা কেবল ওয়াশ করে দিয়েছেন।
আঘাতের ওপর একটি ব্যান্ডেজ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের অপারেশন রুমগুলো শত শত গুরুতর আহত মানুষে ভরে গেছে।’ ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলের অত্যন্ত সুরক্ষিত বাধা অতিক্রম করে ১,৩০০ জনেরও বেশি ইসরায়েলিকে হত্যা করার এক সপ্তাহেরও বেশি সময় পরে, ইসরায়েল প্রায় এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো গাজায় সম্ভাব্য স্থল-আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই আক্রমণ ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়িয়ে তুলবে। ইতোমধ্যে অবরুদ্ধ ছিটমহলে চালানো তা-ব বিগত চারটি যুদ্ধকে ছাড়িয়ে গেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ২০০৭ সাল থেকে গাজায় যে অবরোধ চলছে, তার ওপর নতুন করে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপের সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
গাজার শিফা হাসপাতালের বর্তমান ও প্রাক্তন কর্মীরা জানিয়েছেন, আলো জ্বানানের জন্য জ্বালানি নেই। তারা মরিয়া হাসপাতালের ব্যাক-আপ জেনারেটরগুলো চালাচ্ছেন। অবশিষ্ট ডিজেল সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন এবং সমস্ত অপ্রয়োজনীয় লাইট বন্ধ করছেন। হাসপাতালে কাজ করা জিপি মালাক নাঈম বলেন, রোববার আমি শিফা হাসপাতালে সহকর্মীদের সাথে কথা বলেছি। তারা আমাকে বলেছে, হাসপাতালে পর্যাপ্ত শয্যা নেই।
চিকিৎসাকর্মীরা ফ্লোরে আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। টয়লেটে পানির মতো মৌলিক বিষয় থেকে বঞ্চিত সবাই। অপারেটিং রুম এবং মেডিকেল স্টাফরা অবিশ্বাস্যভাবে চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে ২৪ ঘন্টা কাজ করে যাচ্ছেন। তারা কেবল কয়েক ঘণ্টা ঘুমান, যদি কেউ বিছানা খুঁজে পাওয়ার মতো ভাগ্যবান হয়! গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী উত্তর গাজার প্রায় ১১ লাখ ফিলিস্তিনিকে দক্ষিণদিকে যাওয়ার নির্দেশ দেয় এবং তাদের প্রত্যাবর্তনের কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। এই আদেশ জারির পর থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের অনেকেই ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ থেকে রেহাই পাননি। যুদ্ধবিমানগুলো বেসামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২