November 23, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, December 15th, 2023, 7:59 pm

গাজা : ক্ষুধা মেটাতে মানুষ খাচ্ছে গাধার মাংস

অনলাইন ডেস্ক :

গাজার মানুষ একটি রুটির জন্য ভিক্ষা করছে। এক কৌটা মটরশুঁটির জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি অর্থ প্রদান করছে। এমনকি পরিবারের ক্ষুধা মেটানোর জন্য গাধাও জবাই করছে। খাদ্য সহায়তার ট্রাক ইসরায়েলি বোমায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখ-ের বেশির ভাগ অংশে পৌঁছতে পারেনি। ফলে সেখানে শুরু হয়েছে চরম দুর্দশা। হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইসরায়েল গাজার প্রতিটি অংশে আঘাত হানছে। ফলে খাদ্য সহায়তার ট্রাক ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফিলিস্তিনের উত্তরের জাবালিয়ার একজন সাংবাদিক ইউসুফ ফারেস বলেন, ‘রুটি বানানোর জন্য ময়দা পাওয়া এখন কঠিন। যুদ্ধের আগের তুলনায় দাম এখন ৫০ থেকে ১০০ গুণ বেশি।’

তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আজ সকালে আমি একটি রুটির খোঁজে বের হয়েছিলাম কিন্তু পাইনি। বাজারে অবশিষ্টর মধ্যে রয়েছে শিশুদের জন্য মিছরি এবং ক্যানে পাওয়া কিছু শিম। তবে দাম ৫০ গুণ বেশি।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি এমন একজনকেও দেখেছি যে তাঁর পরিবারের কয়েক শ সদস্যকে খাওয়ানোর জন্য একটি গাধা জবাই করেছে।’ জাতিসংঘের মানবিক কার্যালয় ‘ওসিএইচএ’ গত বৃহস্পতিবার বলেছে, মিসরের সীমান্তের কাছে রাফাহ এলাকায় খুব সীমিত সাহায্য বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু সেখানে গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক আশ্রয় নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জাতিসংঘ আরো জানিয়েছে, ‘গাজা স্ট্রিপের বাকি অংশে হামলার তীব্রতা এবং প্রধান সড়কে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাহায্য বিতরণ অনেকাংশে বন্ধই হয়ে গেছে।’

গাজা শহর থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া আবদেল আজিজ মোহাম্মদ (৫৫) বলেন, ‘সাহায্য? কী সাহায্য? আমরা এটা সম্পর্কে শুনেছি মাত্র, কোথাও দেখতে পাইনি।’ আজিজ মোহাম্মদ ও তাঁর পরিবারসহ মোট ৩০ জন গাজা শহর থেকে বাস্তুচ্যুত। তাঁরা গাজার আরো দক্ষিণে বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। টেলিফোনে তিনি বলেন, ‘আমার বড় একটা বাড়ি ছিল, খাবার, বিদ্যুৎ এবং পানিতে ভরা দুটি ফ্রিজ ছিল। এখন যুদ্ধের দুই মাস পর, আমি কিছু রুটির জন্য ভিক্ষা করছি।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটি ক্ষুধার যুদ্ধ। তারা (ইসরায়েল) আমাদের বাড়িঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়েছে। তারা আমাদের বাড়ি, ব্যবসা সব ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদেরকে আরো দক্ষিণে ঠেলে দিয়েছে। আমরা হয় তাদের বোমার আঘতে মরব না হয় ক্ষুধায় মরব।’

ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ‘ইউএনআরডাব্লিউএ’-এর প্রধান বৃহস্পতিবার বলেছেন, ক্ষুধার্ত মানুষ সাহায্যের ট্রাকগুলো থামিয়ে দিচ্ছে সরাসরি খাবার খাওয়ার জন্য। কারণ গাজায় যুদ্ধবিরতি শেষে খুব কমই সাহায্য পেয়েছে।’ এদিকে ত্রাণবাহী ট্রাক মিসরের সঙ্গে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধা পাচ্ছে। কারণ ইসরায়েলি বাহিনী সেখানে চেকপয়েন্ট বসিয়েছে। ২০ অক্টোবর সহায়তা শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল মিসরের নিতজানা ক্রসিংয়ে চেকপয়েন্ট বসিয়েছে। তারা ট্রাকগুলোকে রাফাহ থেকে নিতজানা এবং পেছনে রাস্তা ব্যবহার করতে বাধ্য করেছে। যার ফলে ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না।

বুধবার থেকে ইসরায়েল অন্য আরো একটি স্থানে (ইসরায়েল এবং গাজার মধ্যে কেরেম শালোম ক্রসিং) অতিরিক্ত চেকপয়েন্ট বসিয়েছে। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘বুধবার ১৫২টি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে। আগের দিন প্রবেশ করেছে ১০০, তবে এই সংখ্যাগুলো অতি নগণ্য। গাজায় উদ্ভূত মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলার জন্য যা প্রয়োজন, তার একটি ভগ্নাংশ মাত্র।’ জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ইসরায়েল কেরেম শালোমের মাধ্যমে ট্রাক চলাচল করতে দিতে পারে কিন্তু তা করা হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘এটি কোনোভাবেই ঠিক নয়, ট্রাকগুলোকে রাফাহ ক্রসিং থেকে ফেরত দেওয়া হচ্ছে … যা আরেকটি ধোঁকা।’ সূত্র : রয়টার্স