নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাড়ির নিম্নমানের টায়ারে সড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা। দেশে যত দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়, তার একটি বড় অংশের জন্য যানবাহনে নিম্নমানের টায়ার দায়ী। আন টায়ার ফেটে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা হয় ট্রাকে। দুর্ঘটনার হার ৫৯ শতাংশ। আর ২০ শতাংশ দুর্ঘটনা হয় হালকা যানবাহনে। বাসের ক্ষেত্রে টায়ার ফেটে দুর্ঘটনায় পড়ার হার ১৮ শতাংশ। অন্যদিকে টায়ার ফেটে যত দুর্ঘটনা ঘটে, তার ৩ শতাংশ সংঘটিত হয় মোটরসাইকেলে। বুয়েট এবং পরিবহন খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের দূরপাল্লার বাসে ব্যবহৃত প্রতিটি টায়ার দাম পড়ে ৩৫ হাজার টাকা। এক বছর আগেও তা ছিল ৩০ হাজার ২০০ টাকা। আর ২০২০ সালে প্রতিটি টায়ারের দাম ছিল ২৭ হাজার ৪০০ টাকা। ভালো রাস্তায় চলাচল করলে একটি নতুন টায়ার পেছনের চাকায় ছয় মাস আর সামনের চাকায় দুই মাস চালানো যায়। এখন দেশে প্রতি বছরই বাড়ছে টায়ারের দাম। আমদানির মাধ্যমে পণ্যটির চাহিদার সিংহভাগই পূরণ হয়। কিন্তু বর্তমানে টায়ার ব্যবহারের ক্ষেত্রে মানে ছাড় দেয়া হচ্ছে। ২০১৯ সালের দিকে একটা টায়ারের দাম ছিল ২২ থেকে ২৮ হাজার টাকা। এখন সেটার দাম অনেক বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই পয়সা বাঁচানোর জন্য দুর্বল মানের টায়ার ব্যবহারের প্রবণতা পরিবহন মালিকদের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশে বাড়ছে বাণিজ্যিক পরিবহনের সংখ্যা। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে টায়ার ব্যবহার। বড় হচ্ছে বাজার। বুয়েটের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রতি মাসে টায়ারের চাহিদা রয়েছে ৬০ হাজার ইউনিট, যার সিংহভাগই পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। বাণিজ্যিক যানবাহনের ক্ষেত্রে এ দেশের টায়ারের বাজারে শীর্ষস্থানে রয়েছে ভারতীয় টায়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ রাবার ফ্যাক্টরি বা এমআরএফ। বাণিজ্যিক গাড়ির ৩০ শতাংশ টায়ারের চাহিদাই এমআরএফ পূরণ করে। ভারতীয় আরো তিন প্রতিষ্ঠান বিড়লা, অ্যাপোলো, সিয়াট পূরণ করে যথাক্রমে ১০, ৫ ও ৩ শতাংশ বাণিজ্যিক গাড়ির টায়ারের চাহিদা। দক্ষিণ কোরিয়ার টায়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হ্যানকক পূরণ করে ১ শতাংশ চাহিদা। বাকি ৫১ শতাংশই পূরণ করা হয় চীনের বিভিন্ন নন-ব্র্যান্ড কোম্পানি ও বাংলাদেশের গাজী টায়ার, হুসেইন টায়ারের মতো প্রতিষ্ঠান থেকে।
বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক গাড়ির টায়ারের বাজার ৫ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে এসেছে। সূত্র আরো জানায়, আদর্শ মানদ- অনুযায়ী অনেক প্রতিষ্ঠান ও বাণিজ্যিক যানবাহনে একটি নতুন টায়ার ব্যবহার হয় দুই থেকে ছয় মাস পর্যন্ত। তারপর ওসব টায়ারের একটা বড় অংশই রাবারিং করে রিসাইকেল করা হয়। বর্তমানে রাবারিং করা একেকটি টায়ারের দাম পড়ে মানভেদে ১৪-১৮ হাজার টাকা। বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করা ট্রাকগুলোয় রিসাইকেল টায়ার ব্যবহার বেশি হচ্ছে। দামে কম হওয়ার কারণে ট্রাকচালক ও মালিকরা কম দামের এসব টায়ার ব্যবহার করেন।
নিম্নমানের টায়ার ব্যবহারের কারণে ট্রাকের টায়ার ফেটে দুর্ঘটনার হার বেশি। দেশে বাণিজ্যিক পরিবহনের টায়ারের বাজার ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেলেও পণ্যটি আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের তদারকি হয় না। ফলে দেশের বাজারে নিম্নমানের টায়ার প্রবেশের একটা সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। সাধারণত একটি টায়ারের মেয়াদ ধরা হয় উৎপাদনের পর থেকে পাঁচ বছর। তবে অভিযোগ রয়েছে, বাণিজ্যিক গাড়িতে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মেয়াদের এ সময়সীমা নিয়ে পরিবহন চালক বা পরিবহন মালিক কেউই সচেতন নন। আবার মাইলেজ বেশি পাওয়ার জন্য টায়ারের নির্ধারিত ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বাতাস ভরে রাখেন চালকরা।
নিম্নমানের টায়ারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বাতাস ভরে রাখার কারণে প্রতিনিয়ত টায়ার ফেটে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, ‘বাণিজ্যিক পরিবহনগুলোকে প্রতি বছর ফিটনেস সনদ হালনাগাদ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ব্যবহূত টায়ারের মানসহ আনুষঙ্গিক বিষয় খতিয়ে দেখা হয়। কিন্তু শুধু এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশে ব্যবহূত টায়ারের মান নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমদানি পর্যায় থেকে প্রথম উদ্যোগটি আসতে হবে। মানসম্মত টায়ার আমদানি করতে হবে। পাশাপাশি পরিবহন মালিক ও চালকদেরও টায়ার ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
আরও পড়ুন
বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি
ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র: বিশেষজ্ঞ
চুয়াডাঙ্গায় রাতে বৃষ্টি দিনে সূর্যের চোখ রাঙানি, রেকর্ড তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি