May 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, September 25th, 2023, 7:42 pm

গায়ক থেকে স্টাইলিশ নায়ক

অনলাইন ডেস্ক :

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ের বাংলা চলচ্চিত্রের সাড়া জাগানো একজন নায়ক। চিরসবুজ ও স্টাইলিশ নায়ক হিসেবে তার বেশ পরিচিতি। সময়ের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন তিনি। তার ফ্যাশন ধারণা অবাক করে দিয়েছিল আশির দশকের তরুণ-তরুণীদের। সিনেমার নায়কদের জন্য তিনি দেখিয়েছেন নতুন পথ। যার ফলে তাকে বলা হয় বাংলাদেশের সিনেমার প্রথম স্টাইল আইকন। বলছি, বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক জাফর ইকবালের কথা। শুধু অভিনয়শিল্পী নয়, পাশাপাশি তিনি ছিলেন একজন গিটারিস্ট এবং সংগীতশিল্পীও। জাফর ইকবালের বড় ভাই আনোয়ার পারভেজ ছিলেন দেশের খ্যাতিমান সংগীত পরিচালক। ছোট বোন কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ। ভাই-বোনের মতো জাফর ইকবালও ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন গান দিয়ে। গায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ প্রতিভাবান।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে বন্ধু তোতা, মাহমুদ ও ফারুককে নিয়ে একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন জাফর ইকবাল। সে ব্যান্ডের নাম ছিল ‘রোলিং স্টোন’। এরপর ভাই আনোয়ার পারভেজের হাত ধরে প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন। তার গাওয়া প্রথম প্লেব্যাক ছিল ‘হয় যদি বদনাম হোক আরও’। সেই সময় গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। এরপর কিংবদন্তি সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী তাকে দিয়ে অসংখ্য সিনেমায় গান করিয়েছিলেন। ১৯৬৭ সালে বন্ধুদের নিয়ে ‘র‌্যাম্বলিং স্টোনস’ নামের একটি ব্যান্ড গঠন করেছিলেন জাফর ইকবাল। এই ব্যান্ডের হয়ে বহু কনসার্ট করেছিলেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো, কনসার্ট করতে গিয়েই তার নায়ক হওয়ার জার্নির শুরু হয়।

১৯৬৯ সালে এক অনুষ্ঠানে তিনি যখন মঞ্চে গিটার বাজিয়ে গলা ছেড়ে গাইছেন, তখন দর্শক সারিতে বসা নন্দিত নির্মাতা খান আতাউর রহমান। স্টেজের সেই সুদর্শন তরুণের মাঝে তিনি দেখতে পান আগামীর চিত্রনায়ককে। তাই নিজের পরবর্তী সিনেমা ‘আপন পর’-এ জাফর ইকবালকে কাস্ট করেন। আর এভাবেই গায়ক থেকে নায়ক হয়ে ওঠেন জাফর ইকবাল। সিনেমায় গান গাইতে গাইতে নয়, কনসার্ট করতে গিয়েই তার নায়ক হওয়ার জার্নির শুরু। কনসার্টের দর্শক সারিতে বসা নন্দিত নির্মাতা খান আতাউর রহমান জাফর ইকবালের মধ্যে দেখতে পান আগামীর চিত্রনায়ককে। তাই নিজের পরবর্তী সিনেমা ‘আপন পর’-এ জাফর ইকবালকে কাস্ট করেন। আর এভাবেই গায়ক থেকে তিনি বনে যান নায়ক।

১৯৬৯ সালের এই সিনেমায় ববিতার সঙ্গে জুটি বাঁধেন তিনি। এরপর একসঙ্গেএই জুটিকে প্রায় ৩০টি সিনেমায় দেখা যায়। ক্যারিয়ার শুরু করার এক বছর পরই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। সেই সময় তিনি অংশ নিয়েছিলেন মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে। স্বাধীনতার পর পুনরায় সিনেমায় নিয়মিত হন জাফর ইকবাল। তার ক্যারিয়ারে উল্লেখযোগ্য প্রথম সাফল্য আসে ১৯৭৫ সালে ‘মাস্তান’ সিনেমা দিয়ে। এই সিনেমা তাকে প্রথম সারির জনপ্রিয় নায়কে পরিণত করে। রোমান্টিক কিংবা কোনো টগবগে রাগী তরুণের ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয় জয় করা এই অভিনেতা।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে জাফর ইকবাল দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে-‘বাঁদি থেকে বেগম’, ‘সুর্য সংগ্রাম’, ‘দিনের পর দিন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘ বিজলী বাদল’, ‘আশীর্বাদ’, ‘মর্যাদা’, ‘নয়নের আলো’, ‘মিস লংকা’, ‘প্রেমিক’, ‘অপেক্ষা’, ‘যোগাযোগ’, ‘অবুঝ হৃদয়’, ‘বদনাম’, ‘গর্জন’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’ ও ‘অবদান’ ইত্যাদি। সোমবার এই নায়কের জন্মদিন।

১৯৫০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে ঢাকায় তার জন্ম। শোনা যায়, তুমুল জনপ্রিয়তা আর সাফল্য পেলেও ব্যক্তিজীবনে অশান্তিতে ছিলেন জাফর ইকবাল। মানসিক অবসাদে আক্রান্ত হয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন অনিয়ন্ত্রিত জীবনে। মদ হয়ে যায় তার নিত্যসঙ্গী। যার ফলে আক্রান্ত হন মরণব্যাধি ক্যানসারে। নষ্ট হয়ে যায় তার হার্ট ও দুই কিডনি। নানা জটিল রোগে জর্জরিত হয়ে অবশেষে ১৯৯২ সালের ৮ জানুয়ারি মারা যান জাফর ইকবাল।