নিজস্ব প্রতিবেদক:
মাত্রাতিরিক্ত গতির কারণে দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোতে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও জাতীয় মহাসড়কসহ দেশের বিভিন্ন সড়কে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। কিন্তু দেশের অনেক সড়কেই গাড়ির অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা নেই। মূলত সড়কে সংঘটিত ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনার জন্য দায়ি চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও অতিরিক্ত গতি। সড়কে কোনো গাড়ি যাতে নির্ধারিত গতির চেয়ে বেশি গতিতে চলতে না পারে সেজন্য হাইওয়ে পুলিশ সীমিত পরিসরে স্পিড গান প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এখন দেশের সব সড়কে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বিআরটিএ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাধারণত সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের সময়ই ঠিক করা হয় তাতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি কত হবে। ছোট-বড় একমুখী বাঁক, দ্বিমুখী বাঁক, মোড় এবং একটানা সোজা রাস্তার দৈর্ঘ্যরে ভিত্তিতে প্রকৌশলীরা সড়কের নানা অংশের গতিসীমা নির্ধারণ করে। নকশা অনুযায়ী বাংলাদেশের সবক’টি জাতীয় মহাসড়কে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। স্থানভেদে ওই গতিসীমা আরো কম। জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে গতিসীমা আরোপ করা হলেও বেশির ভাগ স্থানীয় সড়কে এখনো বিষয়টি উপেক্ষিত। মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ধারা ৪৪-এর উপধারা-১ অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণীর সড়কে মোটরযানের গতিসীমা নির্ধারণের জন্য দেশের সব সড়ক-মহাসড়কের জন্য গতিসীমা ম্যাপ তৈরি করা হবে। ওই ম্যাপে মহাসড়কের কোন অংশে গাড়ির সর্বোচ্চ গতি কত হবে তা ঠিক করে দেয়া হবে। ওই ম্যাপ ধরেই পরবর্তী সময়ে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে বিআরটিএ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে।
সূত্র জানায়, সড়ক নির্মাণকারী সংস্থাগুলোকে গতিসীমা ম্যাপ তৈরির নির্দেশনা দিয়েছি বিআরটিএ। ওই ম্যাপ অনুযায়ী সড়কগুলোতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সাইন-সিগন্যাল স্থাপনেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশের সব সড়ক-মহাসড়কেই তা করা হবে। ম্যাপ তৈরির কাজটি সম্পন্ন হলে সড়ক আইন অনুযায়ী অতিরিক্ত গতিতে চলা যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে যেমন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে। যা সড়ক দুর্ঘটনার হার কমিয়ে আনতে ভূমিকা রাখবে। জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল এর আগে ২০১৫ সালে দেশের মহাসড়কগুলোতে যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দিয়েছিল। আর অতিরিক্ত গতিতে যানবাহন চলাচল ঠেকাতে গাড়িতে স্পিড গভর্নর নামের একটি যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্তও হয়েছিল। ওই যন্ত্র কোনো গাড়িতে স্থাপন করলে ওই গাড়িটি নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে বেশি গতিতে চলতে পারবে না। নিয়ম অনুযায়ী ফিটনেস সনদ ইস্যু বা হালনাগাদের সময় বিআরটিএর যন্ত্রটি গাড়িতে স্থাপন করে দেয়ার কথা। কিন্তু সংস্থাটি এখনো ওই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার জানান, বাংলাদেশে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি), সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো সংস্থাগুলো সাধারণত সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ করে। সিদ্ধান্ত হয়েছে প্রতিটি সংস্থা তাদের সড়ক নেটওয়ার্কের একটি গতিসীমা ম্যাপ তৈরি করবে। মোট রাস্তার হিসাবসহ ম্যাপিং করা হবে। আর ওই ম্যাপ অনুযায়ী সড়কের কোন জায়গায় গাড়ির সর্বোচ্চ গতি কত হবে তা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সড়কের আশপাশের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ম্যাপটি তৈরি হবে। জাতীয় মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু সড়কের সব জায়গায় ওই গতিতে গাড়ি চলতে দেয়া যাবে না। সড়কের পাশে যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কিংবা অফিস-আদালত রয়েছে, সেখানে যানবাহনগুলোকে গতি কমানোর নির্দেশক দেয়া হবে। হাটবাজার এলাকার জন্যও আলাদা গতিসীমা নির্ধারণ করা হবে। পাশাপাশি গতিসীমা আরোপের ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক ওসব বিষয় ছাড়াও সড়ক অবকাঠামোর বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নেয়া হবে।
আরও পড়ুন
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
কমতে শুরু করেছে কুড়িগ্রামের নদীর পানি, ভাঙন আতঙ্কে মানুষ
দিনাজপুরে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় নিহত ২