নিজস্ব প্রতিবেদক:
লেকের পচা পানির দুর্গন্ধ আর মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী ও বারিধারার বাসিন্দারা। গুলশান লেকের পচা পানির দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে চারিদিকে। লেকটির বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহের সুযোগ বন্ধ করে দেয়া ও যততত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে এ লেকের পানি শুধু পচেই যায়নি বিষাক্তও হয়ে গেছে। লেকের পচা পানি ও ময়লা-আবর্জনায় জন্মাচ্ছে মশা। বলা যায়- গুলশান লেক এখন মশার এক প্রজনন কেন্দ্র। একদিকে মশার যন্ত্রণা অন্যদিকে লেকের পচা পানির দুর্গন্ধে নাকাল অভিজাত এলাকার বাসিন্দারা।
গত বছরের অক্টোবরের শেষ দিকে গুলশান লেকপার্ক ও গুলশান-বনানী লেকের পাড়ে গাছ লাগানো, দখলমুক্ত, লেকের পানি পরিষ্কার রাখা এবং ময়লা- আবর্জনামুক্ত, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিচ্ছন্নতা রাখার দায়িত্ব পায় গুলশান সোসাইটি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গুলশান সোসাইটির মধ্যে পৃথক দুটি সমঝোতা স্মারকও (এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভীন্ন।
বুধবার (২৭ এপ্রিল) দি নিউ নেশনের প্রতিনিধি সরেজমিনে পরিদর্শন করে দেখতে পান, গুলশান সোসাইটি জামে সমজিদ লেকের পাশের বাড়িঘর এবং ছোট ছোট দোকানের মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ও কঠিন বর্জ্য লেকে ফেলা হচ্ছে। আশেপাশের বাড়িঘর থেকে বর্জ্য ফেলার সময় আবর্জনা ও প্লাস্টিক সামগ্রী লেকের পানিতে ভাসতে দেখা গেছে যা পানির স্বাভাবিক রং নষ্ট করেছে। লেকে বর্জ্য ও আবর্জনা ফেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিছক সাইনবোর্ড লেকের হুমকির জন্য দায়ী এই কর্মকাণ্ড থেকে স্থানীয়দের আটকাতে পারেনি। এমনকি দেখা গেছে, লেকের দুই পাড়ের সংযোগকারী একটি বাঁশের সেতু নির্মাণ করে লেক পারাপার করে কর্তৃপক্ষের নাকের আগেই করা হয়েছে। এই ধরনের অস্থায়ী সেতু দিয়ে লেকের সংযোগ যেখানে কূটনৈতিক বাসস্থান রয়েছে সেই এলাকার নিরাপত্তা লঙ্ঘন করছে।
এসব পরিবেশ বিরোধী কার্যকলাপ নিঃসন্দেহে জলজ দেহের পরিবেশগত স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। দুর্গন্ধযুক্ত পানি ও আবর্জনা প্রতিনিয়ত এলাকার বিশুদ্ধ বাতাস নষ্ট করে দিচ্ছে যেখানে মানুষ নাক ঢেকেও দুর্গন্ধ থেকে মুক্তি পেতে পারে না। আবর্জনা এবং বর্জ্য দ্বারা দূষিত দুর্গন্ধযুক্ত বায়ুর কারণে লেকের পাশে সকালে হাঁটতে এবং জগিং করতে দেখা যায় এমন লোকেরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এলাকাটি কূটনৈতিক অঞ্চলে আবদ্ধ থাকায়, এই ধরনের অবাধ দূষণ দেশের ভাবমূর্তিকেও কলঙ্কিত করছে যেখানে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনও দুর্বল। এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, লেকের গুরুত্ব নিয়ে কর্তৃপক্ষের তেমন গুরুত্ব নেই। কঠোরতা এবং ক্রমাগত তদারকি ছাড়া, এই দূষণ অব্যাহত থাকবে এবং হ্রদটি একদিন মারা যাবে, তারা বলেছেন।
উল্লেখ্য, গুলশান-বারিধারা লেককে অবৈধ দখল-দূষণ থেকে রক্ষা করতে ২০১০ সালে সরকার ৪১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। এ প্রকল্পের আওতায় ৮৭ একর জমি অধিগ্রহণের কথা রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। জমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হয়নি। ফলে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে না পারায় এর ব্যয় বেড়ে গেছে নির্ধারিত বাজেটের কয়েকগুণ বেশি। বর্তমানে প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে জমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা। বাকি দুই হাজার ৮৮৬ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছে অন্যান্য অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক