নিজস্ব প্রতিবেদক:
বেদখল হয়ে রয়েছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমান জমি। ওসব জমি বছরের পর বছর বেদখল থাকলেও উদ্ধারের কোনো উদ্যোগ নেই। এমনকি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে বেদখল জমি সম্পর্কিত কোনো তথ্যও নেই। সংস্থাটির বেদখল হওয়া জমির পরিমাণ ১০ হাজার ৮৮৯ বিঘা। সরকারি হিসাবে যার বর্তমান বাজারমূল্য ৫৪ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা। মিরপুরের বিভিন্ন সেকশনে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মোট জমি রয়েছে ৩ হাজার ৬১৫ দশমিক ৬৫ একর (প্রায় ২ লাখ ১৮ হাজার ৭৪৭ কাঠা বা ১০ হাজার ৯৫৭ বিঘা)। তার মধ্যে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে শুধু ৪৭৪টি আবাসিক প্লটের (৯৭৬ কাঠা) তালিকা বা হিসাব রয়েছে। বাকি প্রায় ২ লাখ ১৭ হাজার ৭৭১ কাঠা (১০ হাজার ৮৮৯ বিঘা) জমির কোনো ধরনের বরাদ্দ, বণ্টন, বিক্রির তথ্য নেই। এমনকি ওসব জমি গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের দখলে থাকারও কোনো প্রমাণ নেই। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বিভিন্ন অনিয়ম ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান না হওয়ার কারণেই বেদখল হয়ে গেছে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিপুল সম্পত্তি। যদিও মন্ত্রণালয় বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে নতুন করে কাজ করেছে। ঢাকা ডিভিশন-১ মিরপুরের আওতায় মিরপুর সেকশন-১, ২, ৩, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১১, ১২ ও রূপনগর সম্প্রসারণ দ্বিতীয় পর্ব এবং বাস্তুহারা কোর হাউজে মোট ১০ হাজার ৯৫৭ বিঘা জমি রয়েছে। ওই জমিতে ৪ হাজার ৬১৯টি আবাসিক প্লট, ২২৬টি বাণিজ্যিক প্লট, ১২৬টি প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, ৩১৮টি শিল্প প্লট, ২ হাজার ৪৮০টি পুনর্বাসন প্লট, ৬ হাজার ৮৪০টি নির্মিত আধাপাকা টিনশেড বাড়ি, ১৪১টি অনির্মিত আধাপাকা টিনশেড বাড়ি ও ৬ হাজার ৮৫৬টি নিউক্লিয়াস (একক) বাড়ি রয়েছে। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০০০-এর ধারা ৭(চ) অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের মালিকানাধীন জমি রক্ষণাবেক্ষণ এবং ওই জমিতে বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট, ইমরাত নির্মাণ প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব। একই আইনের ধারা ৭(ছ) অনুযায়ী নির্মিত বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, ফ্ল্যাট ও ইমারত বিক্রি, ইজারা বা অন্যভাবে বিলিবণ্টন করাও প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু ওসব জমির মধ্যে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে শুধু ৯৭৬ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা ৪৭৪টি আবাসিক প্লটের তালিকা পাওয়া গেছে। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কাছে বাকি জমির কোনো হিসাব বা তথ্য নেই।
সূত্র জানায়, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বেদখল হওয়া জমির আর্থিক মূল্য হিসাব ৫৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি। মিরপুর এলাকার সর্বনিম্ন জমির দাম ধরে নিরীক্ষকরা ওই হিসাব করেছেন। ওই হিসাবে প্রতি কাঠার দাম ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। বাস্তবে মিরপুরে বর্তমান জমির বাজারমূল্য প্রতি কাঠা ৪০ লাখ টাকারও বেশি। আর এক হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম ৫০-৬০ লাখ টাকা। বর্তমানে মিরপুরে সংস্থাটির প্রায় ৪০ একর জমি রয়েছে। তার মধ্যে ৫ একরে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে এবং ১০ একর জমিতে একটি বস্তি রয়েছে। বাকি পুরো জমিই অব্যবহৃত ফেলে রাখা হয়েছে। তার মধ্যেই সংস্থাটির কিছু অসাধু কর্মকর্তা সম্প্রতি মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের প্যারিস রোডের মাঠটিকে প্লট হিসেবে বরাদ্দ দিয়ে দেয়। অথচ সব ম্যাপে সেটিকে মাঠ দেখানো হয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন জানান, আইন অনুযায়ী জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ অবৈধ জমি ইনভেন্টরি করার কথা থাকলেও নিরীক্ষকরা প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ-সম্পর্কিত হালনাগাদ কোনো তথ্য পায়নি। ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর অডিট ইন্সপেকশন রিপোর্ট জারি এবং ২০২১ সালের ১৮ মার্চ তাগিদপত্র পাঠানোর পরও প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। মূলত কিছু লোককে অপ্রাপ্য সুবিধা দেয়ার জন্য এবং কর্মরত কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই সরকারি ওই বিপুল সম্পত্তি বেদখল হয়ে গেছে বলে নিরীক্ষা প্রতিবেদনের মন্তব্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক