জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :
সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে যন্ত্র আট বছর ও আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র তিন বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে। এতে বাইরে কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগী ও রোগীর স্বজনদের।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে হাসপাতালে আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র সরবরাহ করা হলেও সেটি প্রথম দিন থেকেই বিকল হয়ে রয়েছে। আট বছর ধরে কাজ করছে না এক্স-রে যন্ত্র। এসব চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল থাকায় বাধ্য হয়েই রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটে যেতে হচ্ছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্টের অধিকাংশ পদ শূন্য থাকায় এখানে ইসিজিসহ রক্তের পরীক্ষা পর্যন্ত হচ্ছে না।
সম্প্রতি পা মচকে যাওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন জোছনা বেগম নামের এক গৃহিণী। চিকিৎসক তাঁকে এক্স-রে করার পরামর্শ দিলে তিনি বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে এক্স-রে করান। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে বাইরের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষারকয়েক গুণ বেশি। এতে আমাদের মতো অসহায় রোগীদের সমস্যা হয়।’
গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি, হৃদ্রোগ, চক্ষু, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসকের আটটি পদ শূন্য রয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১০টি মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদের মধ্যে রয়েছেন মাত্র ২ জন, বাকি ৮টি পদই শূন্য।
শাহরিয়ার আলম নামের আরেক রোগী বলেন, কিছুদিন ধরে গলাব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। খেতে গেলে গলায় আটকে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। হাসপাতালে আসার পর জানতে পারেন, এ বিভাগের চিকিৎসক নেই। এখন চিকিৎসা নিতে হলে শহরের হাসপাতালে যেতে হবে। এতে তাঁর অনেক টাকা খরচ হয়ে যাবে।
গোলাপগঞ্জের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুল জলিল বলেন, চিকিৎসক ও টেকনোলজিস্ট না থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলার সাধারণ রোগীদের যাতে চিকিৎসার জন্য শহরমুখী হতে না হয়, সে জন্য অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিয়ে হাসপাতালের সেবার কার্যক্রম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুদর্শন সেন বলেন, ‘চিকিৎসক ও টেকনিশিয়ান সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি, হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট ও প্যাথলজি বিভাগের শূন্যপদগুলো পূরণ হবে।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সুদর্শন সেন আরও বলেন, হাসপাতালের আগের আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রটি বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই অকেজো হয়েছিল। গত মাসে নতুন আরেকটি আলট্রাসনোগ্রাম যন্ত্র আনা হয়েছে। তবে ওই যন্ত্র পরিচালনায় দক্ষ চিকিৎসক নেই। সেটি পরিচালনার জন্য কয়েকজন চিকিৎসককে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সুদর্শন সেন আরও বলেন, ‘হাসপাতালের এক্স-রে যন্ত্র প্রায় আট বছর ধরে বিকল হয়ে রয়েছে। আমরা নতুন আরও একটি যন্ত্রের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আবেদন করেছি।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, গোলাপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ কয়েকটি হাসপাতালে টেকনোলজিস্টসহ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে নিয়োগপ্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সেই সঙ্গে যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম অকেজো রয়েছে, সেগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি