অনলাইন ডেস্ক :
আফগানিস্তানে সামরিক ও গোয়েন্দা অপারেশন চালাতে পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিক একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের কাছে এ বিষয়টি জানিয়েছে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন। গত শুক্রবার সকালে কংগ্রেস সদস্যদের এই ক্লাসিফায়েড বিষয়ে ব্রিফিং করা হয়। এ সম্পর্কে জানেন এমন তিনটি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। একটি সূত্র বলেছেন, নিজেদের দেশে সন্ত্রাস বিরোধী প্রচেষ্টায় এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার বিনিময়ে এমন একটি সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। আরেকটি সূত্র বলেছেন, এর শর্ত নিয়ে দর কষাকষি চলছে। এখনও বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। ফলে এতে পরিবর্তন আসতে পারে।
আফগানিস্তানে ২০ বছর যুদ্ধ শেষে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে আগস্টে। এখন আর সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি নেই। এই ফাঁকে আইএস-কে এবং অন্য শত্রুপক্ষ আফগানিস্তানে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এসব সন্ত্রাস বিরোধী অপারেশন চালাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র- এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেষ্টা চালাচ্ছে হোয়াইট হাউজ। চলমান গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের প্রচেষ্টায় আফগানিস্তানে যেতে বর্তমানে শুধু পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী। কিন্তু আফগানিস্তানে পৌঁছতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যে আকাশসীমা প্রয়োজন তার অব্যাহত সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তি নেই। ফলে আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে যদি মার্কিন নাগরিক ও অন্যান্যের উদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্র ফ্লাইট শুরু করতে চায়, তখন পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত বিমান করিডোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। তৃতীয় সূত্রটি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা যখন পাকিস্তান সফরে গিয়েছিলেন, তখন এই চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিনিময়ে পাকিস্তান কি চায় এবং যুক্তরাষ্ট্রই বা তাদেরকে বিনিময়ে কত বেশি দিতে চায়, এসব বিষয় এখনও স্পষ্ট নয়। এখনও দুই দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। এ অবস্থায় আফগানিস্তানমুখী যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিমান বা ড্রোন প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করতে পারে পাকিস্তান। এমন এক ঝুঁকির মধ্যে আছে যুক্তরাষ্ট্র।অন্যদিকে নিরাপত্তাজনিত কারণে রুদ্ধদ্বার ব্রিফিং সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্তব্য করবে না বলে জানিয়েছেন পেন্টাগনের এক মুখপাত্র। এ বিষয়ে মন্তব্য পেতে ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ওয়াশিংটনে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিএনএন। একই সময়ে সূত্রগুলো বলেছেন, আফগানিস্তানে কথিত অপারেশন চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য শীর্ষ স্থান হিসেবে ভাবা হচ্ছে উজবেকিস্তান ও তাজিকিস্তানকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং স্থানীয় কিছু রাজনীতিকের তীব্র বিরোধিতা আসতে পারে। এ মাসের শুরুর দিকে উজবেকিস্তান সফর করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শেরম্যান। সেখানে তিনি প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের সঙ্গে আফগানিস্তান নিয়ে আলোচনা করেছেন। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের ঘাঁটি যেমন কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার মিশন পরিচালনা করছে। ফলে তাদের ড্রোনকে বহু পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে। এসব ড্রোন ইরানের পাশ দিয়ে এবং পাকিস্তানের আকাশসীমার ভিতর দিয়ে আফগানিস্তানে অভিযান চালাচ্ছে। এতে আফগানিস্তানের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে ড্রোনগুলোর অনেক বেশি সময় লাগছে। ফলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন আফগানিস্তানের কাছাকাছি কোনো স্থানকে খুঁজছে, যাতে তাদের কাজ সহজ হয়। ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি গত মাসে আইনপ্রণেতাদের বলেছেন, এখনও আফগানিস্তানে দৃষ্টি রাখার সক্ষমতা আছে তার। কিন্তু তা হবে সীমিত। তবে আফগানিস্তানকে ভবিষ্যত সন্ত্রাসের লঞ্চপ্যাড হিসেবে আইসিস বা আল কায়েদার ব্যবহার প্রতিরোধ করার সক্ষমতার বিষয়ে তার আস্থা নেই। গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের কয়েক সপ্তাহ আগে বলেছেন, দেশটিতে অপারেশনের সক্ষমতা রক্ষা করে চলবে যুক্তরাষ্ট্র, যদিও সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সেনা থাকবে না। ৮ই জুলাই তিনি বলেন, দিগন্তরেখায় সন্ত্রাসবিরোধী একটি সক্ষমতা গড়ে তুলছি আমরা। ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি হুমকি এমন যেকোনো কর্মকা-ের বিষয়ে নিবিড় দৃষ্টি রাখতে সহায়ক হবে তা। এর ফলে প্রয়োজনে দ্রুততার সঙ্গে এবং সুচিন্তিতভাবে ব্যবস্থা নেয়া যাবে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি পূরণে হোয়াইট হাউজের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইন প্রণেতারা। ওদিকে বার বার পেন্টাগন থেকে বলা হয়েছে, দিগন্তরেখা সক্ষমতার মধ্য দিয়ে ওই অঞ্চলে সন্ত্রাসেরবিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এটা বলেনি যে, এই সক্ষমতার সদর দফতর এই অঞ্চলে কোথায় হবে।
আরও পড়ুন
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২
তীব্রতর হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায় লেবাননে যুদ্ধ
হারিকেন হেলেনে যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ৯০ জনের মৃত্যু