March 28, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 12th, 2022, 8:50 pm

গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে বাপেক্স

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশে গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এ্যান্ড প্রোডাকশন লিমিটেড (বাপেক্স)। নতুন বছরের শুরুতেই বাপেক্সের পক্ষ থেকে পুরোদমে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শরিয়তপুরে কূপ খননের কাজ শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ২৮টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। তার মধ্যে ৯টি বাপেক্সের আবিষ্কৃত। আর ওই ৯টির মধ্যে বর্তমানে ৭টি উৎপাদনক্ষম। তবে একটি বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক না হওয়ায় স্থগিত করা হয়েছে। সর্বশেষ সিলেটের জকিগঞ্জের গ্যাসক্ষেত্রটিতে পাইপলাইন ও প্রসেস লাইন হওয়ার পরে উৎপাদন শুরু হবে। তাছাড়া বাপেক্সের ১২টি অনুসন্ধান কূপ এবং ১৭টি উন্নয়ন কূপ রয়েছে। জ্বালানি বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত ৩ বছরে অনুসন্ধান ও উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বাপেক্স। সেজন্য ৫টি অনুসন্ধান কূপ খনন, ৮টি উন্নয়ন কূপ খনন এবং ১০টি ওয়ার্কওভার কূপ খননের সিডিউল করা হয়েছে। তার বাইরে আগামী ৩ বছরের জন্য ২৭০ লাইন কিলোমিটার ভূতাত্ত্বিক জরিপ, ১১ হাজার ২২০ লাইন কিলোমিটার ২ডি সাইসমিক জরিপ, ২৫৮০ বর্গকিলোমিটার ৩ডি সাইসমিক জরিপ, ৬০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ৯০ ঘনফুট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি প্রসেস প্লান্ট স্থাপন করা হবে। প্রসেস প্লান্ট করার জন্য টেন্ডার দেয়া হয়েছে। শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্রের জন্য ওয়েলহেড কম্প্রেসর স্থাপন এবং শ্রীকাইল ইস্ট-১ কূপের জন্য গ্যাস গ্যাদারিং পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। আর ওসব পরিকল্পনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে বাপেক্সকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
সূত্র জানায়, দেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান ও উৎপাদন কার্যক্রমগুলো ত্বরান্বিত করা খুবই জরুরি। কারণ বর্তমানে দেশে গ্যাসের যে পরিমাণ রিজার্ভ রয়েছে তা দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট নয়। এমন পরিস্থিতিতে বাপেক্স কর্তৃক গ্যাস অনুসন্ধানের জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ওই লক্ষ্যেই শরীয়তপুরের ভূ-গঠনে অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে দেশের গ্যাস রিজার্ভ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রস্তাবিত কূপটি ভোলা নর্থ গ্যাসক্ষেত্র থেকে ৬০ কিলোমিটার এবং শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে প্রায় ৯২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। ২০২১ এর জুলাই থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরে ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। তাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫.৯০ কোটি টাকা। সেখান থেকে বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলনযোগ্য তেল/গ্যাস আবিষ্কার সাপেক্ষে অতিরিক্ত ৭৩.০৮ বিসিএফ গ্যাস মজুদ বৃদ্ধি পাবে এবং দৈনিক গড়ে ৫-১০ এমএমএসসিএফ গ্যাস উৎপাদিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, দেশের স্থলভাগের যে কোনো স্থানে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানের সক্ষমতা বাপেক্সের রয়েছে। বাপেক্সের রিগ, ২ডি, ৩ডি সাইসমিক সার্ভে যন্ত্রপাতিসহ সব যন্ত্র আন্তর্জাতিক মানের। বাপেক্সের জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী একটি অর্গানোগ্রামও করা হয়েছে। ওই অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী দক্ষ জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। তারা দেশের স্থলভাগে সর্বত্রই অনুসন্ধান চালাবে এবং জরিপে পাওয়া গেলে যে কোন জায়গা থেকেই গ্যাস উত্তোলনের জন্য কূপ খননের সক্ষমতা বাপেক্সের আছে।
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, গত কয়েক বছরের ব্যবধানে দেখা যায় বাপেক্সের স্থলভাগে কূপ খনন, অনুসন্ধান কূপ, ওয়ার্কওভার, ২ডি ও ৩ডি সাইসমিকসহ সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে। সেজন্যই বাপেক্সকে বসিয়ে না রেখে তার সক্ষমতার মধ্যে যতোগুলো কাজ করানো যায় সরকারের উচিত তাদের তা দেয়া। কূপ খননে কিছু রিস্ক রয়েছে, গ্যাস না পেলে অনেকেই বলে অযথা টাকা খরচ হলো। কিন্তু গ্যাস না পাওয়াও কিন্তু অনুসন্ধানের একটি অংশ। যতোগুলো কূপ খনন করা হবে সব কটিতেই গ্যাস পাওয়া যাবে এমন কোন কথা নেই। শরিয়তপুরের ক্ষেত্রটিতে যদি গ্যাস নাও পাওয়া যায় তারপরও বাপেক্সের সক্ষমতা প্রমাণ হলো। আর পেলে তো কথাই নেই। পাল্টে যাবে পুরো দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, শরীয়তপুরে প্রথমবারের মতো তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন শুরু করেছে বাপেক্স। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের পর দুই বছরের অনুসন্ধানের জন্য তৈরি হচ্ছে রাস্তাঘাট-কালভার্ট। যদি গ্যাসের মজুত নিশ্চিত হয় তখনই উত্তোলন কাজ শুরু করা হবে। ওই এলাকায় কূপ খননের উদ্দেশে ২০১৪-১৫ সালে শরীয়তপুরের মেঘনা নদীর তীর থেকে খুলনা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে দ্বিমাত্রিক সিসমিক জরিপ হয়। জরিপে শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের দিনারা গ্রামে প্রাকৃতিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর থেকেই শুরু হয় নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পরে জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে তৈরি করা হয় ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দেড় বছর মেয়াদে ‘শরীয়তপুর তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প-১’।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ জানান, প্রতিদিন গ্যাস কূপ অনুসন্ধানের কাজ ত্বরান্বিত হচ্ছে। তবে বিগত সরকারগুলোর সময়ে কাজ না হওয়ার কারণে দেশ কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে। কূপ খনন করার জন্য যে ২ডি-৩ডি সিসমিক সার্ভের প্রয়োজন হয় সেগুলোও তারা করেনি। ওই ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করা যায় খুব শিগগিরই এসবের সুফল পাওয়া যাবে। ওই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে শরীয়তপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন প্রকল্প।