November 5, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, July 14th, 2024, 3:27 pm

গ্যাস সংকটে বন্ধ ফেঞ্চুগঞ্জ শাহজালাল সারকারখানা: ৫২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষতি

জেলা প্রতিনিধি, সিলেট :

শুধুমাত্র গ্যাস সংকটের কারণে এ বছরের ১৩ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড। ফলে কারখানাটি ৫২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে।দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যেতে পারে এমন আশংকা রয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষের। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এসএফসিএল সার উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হলেও গ্যাস সংকট দেখিয়ে কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। গ্যাস সংকটের অজুহাতে ৪ মাস যাবৎ শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল) বন্ধের যে কোন ষড়যন্ত্র রুখতে মানববন্ধন কর্মসূচিসহ তীব্র আন্দোলন ডাক আসতে পারে, এমনটাই জানালেন স্থানীয়রা।

স্হানীয়রা জানান, সিলেটের কৈলাসটিলায় নতুন সন্ধান পাওয়া ৮ নং গ্যাসকুপ থেকে দৈনিক ২১ মিলিয়ন গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে।
অথচ গ্যাস সংকট দেখিয়ে দেশের ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের কারনে বৃহৎ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন দেশের কৃষকরা। এসএফসিএল এ শ্রমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন ৬৬১ জন। এছাড়া দৈনিক হাজিরা শ্রমিক রয়েছেন ৪২৫ জন। কারখানা বন্ধের ফলে কারখানার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষেভাবে জড়িত শ্রমিক কর্মচারী, কর্মকর্তাসহ স্থানীয় লক্ষাধিক মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় বিসিআইসি’র মাতৃশিল্প প্রতিষ্ঠান ন্যাচারেল গ্যাস ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী লিমিটেড’র পাশেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয় শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জুন ভিত্তিপ্রস্থর করা হয় এসএফসিএল’র। ৫ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সারকারখানাটি বাণিজ্যিকভাবে সার উৎপাদনে যায় ২০১৬ সালের ৬ মার্চ। শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের নিরলস পরিশ্রমে প্রায় প্রতি বছর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম ছিল এসএফসিএল।

কারখানা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে এসএফসিএল’র লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিকটন। ১২ মার্চ অর্থাৎ কারখানা বন্ধের আগের দিন পর্যন্ত কারখানায় উৎপাদিত সারের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ৮১২ মেট্রিকটন। এক হিসেবে দেখা যায় ১৩ মার্চ থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১১৯ দিনে বিসিআইসি অর্থাৎ সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৫২৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এই কারখানাটি সচল রাখতে দৈনিক ৪২ এমএমসিএফ (মিলিয়ন কিউবিক ফুট) গ্যাসের প্রয়োজন।

বর্তমানে ইউরিয়া সারের টন প্রতি আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা। যেখানে কারখানায় উৎপাদিত সারের মূল্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা। উৎপাদন শুরু থেকে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত গেল ৮ বছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে এসএফসিএল এর অবদান ৫৫৫ কোটি টাকা।

এদিকে গ্যাস সংকট দেখিয়ে শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল) বন্ধ থাকায় উদ্বেগ ও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাকুল ইসলাম সাব্বির।
তিনি এ নিয়ে তার অফিসকক্ষে ফেঞ্চুগঞ্জ প্রেসক্লাব ও কারখানার সিবিএ’র নেতৃবৃন্দদের নিয়ে মতবিনিময় করেছেন।

সভায় অনতিবিলম্বে গ্যাস সরবরাহ চালু করে এসএফসিএল এর উৎপাদন চলমান রাখার আহবান জানানো হয়। অন্যতায় গ্যাস সরবরাহ নিয়মিত রাখার দাবিতে শ্রমিক-জনতার আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান উপস্থিত নেতৃবৃন্দ। এ সময় সিলেট তথা ফেঞ্চুগঞ্জের স্বার্থে যে কোন কঠোর আন্দোলনে সোচ্চার থাকার ঘোষণা দেন নবনির্বাচিত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাকুল ইসলাম সাব্বির।

সভায় উপস্থিত ছিলেন ফেঞ্চুগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি রিয়াজ উদদীন ইসকা, সহসভাপতি মামুনুর রশীদ, সহ সম্পাদক মো. দেলওয়ার হোসেন পাপ্পু, অর্থ সম্পাদক বদরুল আমিন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক রুমেল আহসান, সদস্য আরকেদাস চয়ন, এসএচৌধুরী জুলহান ও জুলহাস আহমেদ। শাহজালাল সারকারখানা সিবিএ নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সভাপতি রাজু আহমদ মুন্না, সাধারণ সম্পাদক মোললা মেহেদী হাসান সিদ্দিকী, যুগ্ম সম্পাদক লিয়াকত হাসান প্রমুখ।

এ ব্যাপারে এসএফসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, গ্যাস সরবরাহের কারণে এ বছরের ১৩ মার্চ থেকে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। কারখানার সকল যন্ত্রপাতি সচল অবস্থায় কারখানা বন্ধ করা হয়েছে, তবে এভাবে বন্ধ থাকলে কারখানার বিভিন্ন কেমিক্যাল, ক্যাটালিষ্ট ও সয়ংক্রিয় যন্ত্রপাতি/যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গ্যাস সরবরাহ চালু হলেই উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব বলে জানালেন তিনি।