অনলাইন ডেস্ক :
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকম গ্রাহকদের ২৫০ কোটি টাকা আটকে রেখেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। সোমবার (৪ঠা অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। তিনি বলেন, রাজধানীর পল্টন থানায় এক ভুক্তভোগী কিউকমের মালিক মো. রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার তাকে ডিবি মতিঝিল বিভাগ গ্রেপ্তার করে। তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তার প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকদের প্রায় ২৫০ কোটি টাকার পণ্য আটকে রাখা হয়েছে। ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, করোনাকালে অনলাইনভিত্তিক ই-কমার্স ব্যবসার দ্রুত প্রসার ঘটায় কিউকম অনলাইনে তাদের ব্যবসা শুরু করে। অনেক ক্রেতা কিউকমে মালামাল অর্ডার করে পণ্য না পাওয়ায় প্রতারিত হয়েছেন। এক ভুক্তভোগী কিউকমে মালামাল অর্ডার করে পণ্য না পাওয়ায় তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে পল্টন থানায় একটি মামলা করেন। এরপর গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগ মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করে। তিনি আরও বলেন, কিউকম প্রায় লক্ষাধিক পণ্য অনলাইনে বিক্রি করে। ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য কিউকম ‘বিজয় আওয়ার’ ‘স্বাধীনতা আওয়ার’ ‘বিগ বিলিয়ন’ নামে ২ থেকে ১৫ দিন সময় দিয়ে অনেক কম দামে মোটরসাইকেল অফার করতো। এক লাখ ৬৭ হাজার টাকার মোটরসাইকেল এক লাখ ২০ হাজার টাকায় পাওয়ার অফার পেয়ে ক্রেতারা নগদ টাকা পরিশোধের মাধ্যমে মোটরসাইকেল অর্ডার করতেন। কিন্তু সময়মতো কিউকম পণ্য সরবরাহ না করায় সব ক্রেতা হতাশ হয়ে কিউকমে যোগাযোগ করে। কিউকম লাভে টাকা ফেরত নেওয়ার অফার করলে ক্রেতারা লোভে পড়ে লাভের অংশ হতে ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমে কিউকম হতে টাকার চেক নেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক গত জুন মাসে এসক্রো সিস্টেম চালু করায় ক্রেতার টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত পেমেন্ট গেটওয়ের মাধ্যমে চলে যায়। কিউকমের পেমেন্ট গেটওয়ে ছিল ফোস্টার। কিউকমে ক্রেতা পণ্য অর্ডার করলে ক্রেতার পেমেন্ট চলে যায় ফোস্টারের কাছে। কিউকম ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছে দিয়ে চালানসহ ডকুমেন্ট ফোস্টারে জমা দেয়। ফোস্টারের পক্ষ থেকে ক্রেতাকে ফোন করার মাধ্যমে পণ্য বুঝে পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর কিউকমকে টাকা দেয় তারা। ক্রেতা পণ্য বুঝে না পেলে ফোস্টার কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রুফ অব ডেলিভারির নির্দেশনা মোতাবেক কিউকমের টাকা আটকে দেয় ফোস্টার। যার ফলে ক্রেতা পণ্য কিংবা টাকা কোনটিই পায় না। তিনি আরও বলেন, কিউকমের মোটরসাইকেলে ছাড় দেওয়ার কারণ তার ব্র্যান্ড মার্কেটিং করা। যেহেতু মোটরসাইকেলের চাহিদা অনেক বেশি ও বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে, তাই এই পণ্যে তারা ছাড় দেয়। গোয়েন্দা মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীমের তত্ত্বাবধানে মতিঝিল জোনাল টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আতিকুল ইসলামের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয় বলে জানান ডিবির এই কর্মকর্তা।
সিইও রিপন মিয়া দুই দিনের রিমান্ডে: পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান কিউকমের সিইও রিপন মিয়ার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (৪ঠা অক্টোবর) রিপন মিয়াকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর পল্টন থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে করা মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে দশ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে মামলার তদন্ত সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে এক ভুক্তভোগী কিউকমের মালিক মো. রিপন মিয়ার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা করেন রাজধানীর পল্টন থানায়। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত রোববার তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি মতিঝিল বিভাগ। জানা যায়, অন্যান্য ই-কমার্স সাইটের মতো কিউকমও চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতো। প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ কয়েকটি ই-কমার্স সাইটের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের পর সম্প্রতি অফিস বন্ধ করে দেয় কিউকম। এই ই-কমার্স সাইটটির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের পণ্য সঠিক সময়ে ডেলিভারি না দেওয়াসহ টাকা আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি