নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীতে গ্যাস সংকট জেন নিত্য দিনের সংঙ্গী। আজ এক এলাকায় গ্যাস নেই তো কাল অন্য এলাকায়। রাজধানীবাসী এই সংকট মেনে না নিলেও খুব বেশি প্রতিবাদেও কখনো সোচ্চার হয়নি। তবে, এবার রোজার প্রথম দিনে এমন সংকট তারা মানতে পারছেন না। ভুক্তভোগীরা বলছে, নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ না করেই গ্রাহকদের কাছ থেকে বিল আদায় করছে তিতাস গ্যাস কর্র্তপক্ষ।
এদিকে, গ্যাস না পেয়ে শিল্পগ্রাহকরা তাদের কাক্সিক্ষত উৎপাদন করতে পারছে না। অবশ্য এতে কিছু যায় আসে না তিতাস কর্তৃপক্ষের। সরবরাহ লাইনে গ্যাসের যে পরিমাণ চাপ থাকার কথা, তা অনেক শিল্পমালিকই পান না। ফলে দিনের অধিকাংশ সময় তাদের বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হচ্ছে। গ্যাসের চাপের কারণে অনেক কারখানামালিক তাদের উৎপাদন বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। অথচ একটি কারখানার বিপরীতে যে পরিমাণ গ্যাসের চাপ মঞ্জুর করা হয়, তার ওপর ভিত্তি করে ন্যূনতম চার্জ নিয়ে নিচ্ছে তিতাস। গত কয়েক বছর এ নিয়ে শিল্প মালিকরা নানা জায়গায় অভিযোগ দিলেও সুরাহা হয়নি। উপরন্তু দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে গ্রাহকদের পকেট কাটার পথ আরো প্রশস্ত করেছে সংস্থাটি।
গণমাধ্যমে আসা খবর অনুযায়ী, বিতরণ কোম্পানিগুলো গ্যাসের খুচরা মূল্য ১১৭ শতাংশ বা দ্বিগুণ বাড়ানোর প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে পাঠিয়েছিল। তাতে রান্নার জন্য দুই চুলার সংযোগে ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২১০০ টাকা এবং এক চুলার ব্যয় ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। একই হারে আবাসিকের প্রিপেইড মিটার, শিল্প, সিএনজি, বিদ্যুৎ, ক্যাপটিভ গ্যাসের দামও বাড়ানোর প্রস্তাব ছিল বিতরণ কোম্পানিগুলোর।
গ্যাস খাতে সরকারি কোম্পানি রয়েছে সাতটি। এর ছয়টি বিতরণ কোম্পানি এবং একটি সঞ্চালন কোম্পানি। সঞ্চালন কোম্পানির কাছ থেকে যে দামে গ্যাস পাওয়া যায়, এর সঙ্গে কোম্পানির পরিচালন ব্যয়সহ আরও কিছু আনুসঙ্গিক ব্যয় সমন্বয় করে খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এ অবস্থায় গ্যাসের পাইকারি মূল্য বৃদ্ধির আগেই কেন বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে এল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)-এর।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৩০ জুন গ্যাসের গড়মূল্য ৩২ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ায় বিইআরসি। তাতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ টাকা ৩৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সা হয়। আবাসিক গ্রাহকদের এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকার পরিবর্তে ৯২৫ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকার পরিবর্তে ৯৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। গৃহস্থালিতে মিটারে যারা গ্যাসের বিল দেন, তাদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের ব্যবহারের জন্য প্রতি ঘনমিটার ৯ টাকা ১০ পয়সার পরিবর্তে ১২ টাকা ৬০ পয়সা করা হয় সে সময়।
দেশে দৈনিক সরবরাহের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশের মতো গ্যাসের জোগান দিয়ে থাকে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। গত রোববার সকালে হঠাৎ বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাসের সঙ্গে বালু উঠে আসে। এজন্য জরুরি ভিত্তিতে দুটি প্রসেস ট্রেন ও ছয়টি কূপের উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। হঠাৎ উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় রোববার দুপুরের পর থেকে ধীরে ধীরে গ্যাসের সরবরাহ কমতে থাকে। এতে গ্যাস সংকট আরো তীব্র হয়। চারদিন পরে বৃহস্পতিবার দেশের গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে।
আন্তর্জাতিক মানদ- অনুযায়ী, কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে মজুতের সাড়ে সাত শতাংশ হারে উত্তোলন স্বাভাবিক ধরা হয়। সে হিসেবে বিবিয়ানার দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১১৮ থেকে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস। তবে ক্ষেত্রটি থেকে কখনো কখনো দৈনিক ১৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাসও উত্তোলন করেছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। আর বালু আসার আগের দুই সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বেশির ভাগ দিনই উত্তোলন হয়েছে ১২৫ কোটি ঘনফুটের বেশি গ্যাস। এমনকি আগের দিনও তোলা হয়েছিল ১২৭ কোটি ঘনফুটের বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, সক্ষমতার তুলনায় বেশি গ্যাসের তোলার কারণে অতীতে বাখরাবাদ ও সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্রের করুণ পরিণতি দেখেছে বাংলাদেশ। তাই বিবিয়ানায় বালু ওঠার বিরল ঘটনা সবচেয়ে বেশি উৎপাদনক্ষম গ্যাসক্ষেত্রটির জন্য অশুভ বার্তা।
লভ্যাংশ কোথায় যায়: বিতরণব্যবস্থা আধুনিক করে গ্রাহকদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করার লক্ষ্যে পুঁজিবাজারে শেয়ার ছাড়ে তিতাস গ্যস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি.। হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, বর্তমানে পুঁজিবাজারে তিতাসের মোট শেয়ারের পরিমাণ ৯৮ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার ৮৩১টি। প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্য (ফেসভ্যালু) ১০ টাকা করে রাখা হয়েছে। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী দেখা যায়, কোম্পানিটি কোনো সময় লোকসান গোনেনি।
অপচয় ৩ হাজার কোটি টাকা: পেট্রোবাংলার হিসাবে, প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানির খরচ বর্তমানে ৫০ টাকা। সে অনুযায়ী, বছরে অপচয় হওয়া ৬৫ কোটি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। তবে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হয়। ফলে অপচয় হয় মূলত সাড়ে ৫৮ কোটি ঘনমিটার গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ২ হাজার ৯২৫ কোটি টাকা, অপচয় কমিয়ে যা সাশ্রয় করা সম্ভব।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক