April 26, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, April 24th, 2022, 9:32 pm

ঘাটতি বাজেট পূরণে বেড়েই চলেছে সরকারের ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঘাটতি বাজেট পূরণে সরকারের ব্যাংক ঋণের নির্ভরতা বেড়েই চলেছে। আগামী বাজেটে সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা আরো বাড়বে। কারণ ঘাটতি বাজেট পূরণে ব্যাংক থেকে প্রায় ৯৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে সরকার। যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পাশাপাশি এ বছর যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তার চেয়ে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা বেশি ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেজন্য ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়েছে। সম্প্রতি বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে আগামী বছরের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হয়। ওই কমিটিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত ঋণের আকারও অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কিন্তু এভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়তে থাকায় বেসরকারি বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও বাড়ছে। কারণ সরকার বেশি ঋণ নিয়ে গেলে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের শিল্প বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি বাজেটের আকার ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬৪ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশি ও বিদেশি ঋণ নিয়ে ওই ঘাটতি পূরণ করা হবে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে ঘাটতি পূরণে আগামী অর্থবছরে বিদেশ থেকে ঋণ নেয়ার প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরীণ পর্যায় থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হবে। তার মধ্যে শুধু ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেয়ার অংক ৯৩ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা।
সূত্র জানায়, আগামী বছর অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ওই প্রবৃদ্ধি অর্জনের অন্যতম নিয়ামক হচ্ছে বিনিয়োগ। প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে আগামী অর্থবছরে ১৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তার মধ্যে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগের লক্ষ্য ১০ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপির ২৪ দশমিক ৯ শতাংশ। তাছাড়া সরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ লাখ ৯১ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে পর্যাপ্ত ব্যাংক ঋণের প্রয়োজন। কিন্তু সরকার নিজেই ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ গ্রহণ করলে বেসরকারি খাতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। ফলে বিনিয়োগের কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা নিয়েও সংশয় থাকবে।
সূত্র আরো জানায়, ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা শুধু আগামী বছরেই বাড়ছে তা নয়, চলতি অর্থবছরেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিতে যাচ্ছে সরকার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের শেষ দিকে এসে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা বেশি নেয়া হবে।
এদিকে অর্থনীতিবিদদের মতে, আসন্ন বাজেটে সঞ্চয়পত্র খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমানো একটি ভালো উদ্যোগ। কারণ এটি সবচেয়ে ব্যয়বহুল ঋণ। এর সুদের হার সব ঋণের চেয়ে বেশি। ওই কারণেই ব্যাংক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। তবে বাজেটে যে অর্থ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় বছর শেষে তা পুরোপুরি খরচ হয় না। ফলে ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী পুরো ঋণ ব্যবহার হয় না। কিন্তু তারপরও ব্যাংক ঋণের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সেটি পুরোপুরি নেয়া হলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমবে। সেটি হলে বেসরকারি বিনিয়োগ ও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণের প্রয়োজন আছে। তবে ঋণ গ্রহণের সময় কম সুদের বিষয়টি দেখতে হবে। পাশাপাশি কোন প্রকল্পের জন্য কেন ঋণ নিচ্ছে এগুলোও বুঝতে হবে। যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের অভিমত, অর্থ মন্ত্রণালয় ঋণ গ্রহণ প্রসঙ্গে সতর্ক অবস্থানে আছে। চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম ঋণ নেয়া হচ্ছে। বছরের শুরুতে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১২ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। সেটি কমিয়ে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ২১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদেশি ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমছে ৩২ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। আগামী বছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ কম নেয়া হবে। কারণ সঞ্চয়পত্রের ঋণের বিপরীতে সরকারকে বেশি মাত্রা সুদ পরিশোধ করতে হয়। একই ঋণ ব্যাংক থেকে নেয়া হলে সুদ কম গুনতে হবে। ওই কারণে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে।