এপি, ভারত :
পশ্চিম ভারতের গুজরাট উপকূলে বৃহস্পতিবার আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়ের তাণ্ডবে দুজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার প্রবল বাতাস ও বৃষ্টি নিয়ে পাকিস্তানে আঘাত হানে ঝড়টি।
ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতাস্বরূপ দুই দেশের উপকূলবর্তী ১ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
পশ্চিম গুজরাটের উপকূলে আছড়ে পড়ার সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ৮৫ কিলোমিটার (৫৩ মাইল প্রতি ঘণ্টা) এবং এসময় ১০৫ কিলোমিটার (৬৫ মাইল) পর্যন্ত ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়।
পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা উপকূলবর্তী ৮২ হাজার মানুষকে সরিয়ে নিয়েছে এবং সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রাখা হয়েছে।
পশ্চিম ভারতে ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
তবে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুজনের মৃত্যু ছাড়াও পার্শ্ববর্তী দ্বারকা জেলায় তিনজন আহত হয়েছেন।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পশ্চিম ভারতে প্রায় ১ লাখ মানুষকে সাময়িকভাবে ত্রাণ শিবিরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। ঝড়ে এ অঞ্চলের গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়াসহ স্থলভাগের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
উপকূলীয় শহর মান্ডভির কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারী বাতাসে ভারতের অন্যতম বৃহত্তম বন্দর মুন্দ্রা বন্দরের কিছু শিপিং কন্টেইনার সমুদ্রে ভেসে গেছে।
শুক্রবারের পরে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে দক্ষিণ পাকিস্তানে আঘাত হানার পর প্রতিবেশি ভারতীয় রাজ্য রাজস্থানের দিকে অগ্রসর হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাকিস্তান এখনও গত বছরের মারাত্মক বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
দেশটির অনেক মানুষ দাতব্য সংস্থা, সাহায্য সংস্থা এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দান করা খাবার গ্রহণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছে।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি বন্যা কবলিত সিন্ধু প্রদেশের বন্দর কেটি বন্দরের ১২৫ কিলোমিটার (৭৫ মাইল) দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে।
তারা জানিয়েছে, ‘ঝড়টি প্রথমে একটি ঘূর্ণিঝড়ে এবং তারপরে শুক্রবার সন্ধ্যার মধ্যে একটি নিম্নচাপে পরিণত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় আরব সাগরে ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে দীর্ঘতম আয়ুষ্কালের রেকর্ড তৈরি করেছে। ২০১৯ সালে ‘ঘূর্ণিঝড় কিয়ার’ ৯ দিনের জীবন নিয়ে এই রেকর্ড ধরে রেখেছিল।
গুজরাট সরকার বলেছে, তারা প্রায় ৭০০টি এশিয়াটিক সিংহের আবাসস্থল গির ন্যাশনাল পার্কে বন্যপ্রাণী উদ্ধার এবং ভেড়ে পড়া গাছগুলো সরানোর জন্য ১৮৪টি ইমার্জেন্সি অ্যাকশন স্কোয়াড মোতায়েন করেছে।
শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের জন্য পাকিস্তানের দক্ষিণ উপকূলীয় শহরগুলোতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হয়েছিল।
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশ গত গ্রীষ্মে দেশটির সবচেয়ে মারাত্মক বন্যা হয়েছিল, যাতে কমপক্ষে ১ হাজার ৭৩৯ জন নিহত এবং ৩৩ মিলিয়ন বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) বৃহস্পতিবার বলেছে যে তারা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় পাকিস্তানের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে। পাকিস্তানের সরকার এবং স্থানীয় সাহায্য গোষ্ঠীগুলো বাস্তুচ্যুত লোকদের বিনামূল্যে খাবার এবং পানীয় জল সরবরাহ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, তার সরকার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের রক্ষায় কাজ করছে।
বৃহস্পতিবার ইউনিসেফ সতর্ক করেছে যে পাকিস্তান ও ভারতে ৬ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি শিশু ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে।
ইউনিসেফের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক নোয়ালা স্কিনার বলেছেন, ‘পাকিস্তানে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয় সিন্ধুর শিশু এবং পরিবারগুলোর জন্য একটি নতুন সংকট সৃষ্টি করেছে। এমনিতেই এই প্রদেশটি গত বছরের ভয়াবহ বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।’
২০২১ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের ফ্রিকোয়েন্সি, সময়কাল ও তীব্রতা ১৯৮২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য প্রস্তুতি আরও জরুরি।
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২