চট্টগ্রামে স্কুলছাত্রীদের যৌন নিপীড়নের অভিযোগে বদলী করা কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে এবার সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়ার পর তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ সচিব স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বলা হয়।
ওই অফিস আদেশে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানানো হয়।
এর আগে গত রবিবার বিকালে তাকে নগরীর দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলী করা হয়েছিল।
ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের দু’টি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
চসিকের আদেশে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের শিক্ষা বিভাগে বর্তমানে সংযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মরত থাকা অবস্থায় শৃঙ্খলা পরিপন্থী ও বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রসহ ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের প্রাথমিক সত্যতা থাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চাকরি বিধিমালা ২০১৯ এর ৫৫ ধারা মোতাবেক চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলো। তিনি বিধিমোতাবেক খোরশোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন।’
রবিবার (১ জানুয়ারি) যৌন হয়রানীর অভিযোগে কাপাসগোলা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনকে অবরুদ্ধ করে বিক্ষুব্ধ ছাত্রী ও অভিভাবকদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
পরে বিকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার স্বাক্ষরিত এক আদেশে অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনকে কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সরিয়ে দক্ষিণ পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে পদায়ন করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, হালিশহর আহমদ মিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রোমা বড়ুয়াকে কাপাসগোলা সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক করা হয়।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলে তাকে বহিষ্কারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাও অংশ নেন। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে তার বহিষ্কার দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন। অনেকের হাতে বিভিন্ন দাবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ডও দেখা গেছে।
বিক্ষোভ শুরুর কিছুক্ষণ পর প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দীনকে তার অফিস কক্ষে গিয়ে জুতা নিক্ষেপ করে ছাত্রীরা। বেলা ১২টা পর্যন্ত তাকে অফিসের সামনে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আন্দোলনকারীরা জানায়, শিক্ষক আলাউদ্দীন বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের হয়রানি করে থাকেন। অনেক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ছাত্রীদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ম্যাসেজও দিতেন। কিন্তু তার বিভিন্ন অসৎ কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দিতেন।
শিক্ষককে হামলার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এতে দেখা যায়, শিক্ষকের রুমে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেয়। এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ ছুড়ে মারছেন।
এর আগে ২০১৩ সালের ১১ জুলাই ছবি সত্যায়িত করতে গেলে ওই প্রধান শিক্ষকের কাছে যৌন হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ করেন এক ছাত্রী।
—-ইউএনবি
আরও পড়ুন
এইচএসসির ফল প্রকাশ শিগগিরই: শিক্ষা মন্ত্রণালয়
আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের জন্য সকল ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হবে: বেরোবি উপাচার্য
তিন মাস পর ক্লাসে ফিরলেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা