চট্টগ্রাম মহানগরীতে টিকা কেন্দ্রগুলোতে প্রচন্ড ভিড়ের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। উপচে পড়া ভিড় আর অব্যবস্থাপনার কারণে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।
এক সময় করোনা টিকা গ্রহণে মানুষের মধ্যে অনীহা থাকলেও বর্তমানে টিকা গ্রহণে মানুষের মধ্যে প্রবণতা বাড়লেও বাড়েনি তাদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা। আবার মোবাইল ফোনে কোন মেসেজ না পেয়েও কেন্দ্রেগুলোতে অবাঞ্ছিত ভিড় অনেকটা নিত্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে একদিকে টিকা কেন্দ্রগুলোতে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি, অন্যদিকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও অনেকে টিকা নিতে পারছেন না।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ১০ জন করে করোনা রোগী মারা যাচ্ছে। আক্রান্ত হচ্ছে প্রতিদিন ৮ থেকে ৯শ’ জন।
বুধবার সকাল থেকে নগরীর কয়েকটি টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গছে। সকালে চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতাল টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকা দিতে হাসপাতালের সামনে শত শত মানুষ সমবেত হয়েছেন। হাসপাতালের ভিতরে এক সঙ্গে এতো মানুষের প্রবেশ করানোর সুযোগ না থাকায় ধাপে ধাপে মানুষকে ভেতরে ঢুকানো হয়। কিন্তু প্রতিবার ভেতরে ঢুকানোর জন্য গেট খুলতেই হুমড়ি খেয়ে পড়ে সাধারণ মানুষ। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আবার কখনো রোদের তাপ সহ্য করে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষ নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় না রেখেই লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এমনকি লাইনের কেউ কেউ চাইছেন সামনের জনকে ঠেলে টিকা কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে। এতে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।
সকাল ৮টায় টিকা নিতে আসা ৫৭ বছর বয়সী রহিম সোবাহান জানান, সকাল থেকে অপেক্ষা করছেন কেন্দ্রের বাইরে। ১১টা পর্যন্ত ভেতরে যাওয়ার সুযোগ পাননি তিনি।
এই একই চিত্র দেখা গেছে বন্দর, ইপিজেড ও পতেঙ্গা-হালিশহর এলাকার টিকা কেন্দ্রগুলোতে। তার মধ্যে বন্দরের ধোপপুলস্থ ৩৮নং ওয়ার্ড অফিসের টিকা কেন্দ্রেটি উল্লেখযোগ্য। এখানে অনেকেই টিকা নিবন্ধন করেই টিকার কোন মেসেজ না পেয়েও নিবন্ধন কার্ড নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।
পতেঙ্গার কাটগড় -স্টিল মিল এলাকায় টিকা দিতে আসা একাধিক নারী-পুরুষের লাইন এড়িয়ে তীব্র জটলার দৃশ্য দেখা যায়। তেমনি ইপিজেডের হক সাহেব রোডস্থ মোহাম্মদীয়া স্কুল এবং নিউ মুরিংস্থ আহম্মদীয় সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয় টিকা কেন্দ্রে এবং নিয়মিত টিকা কেন্দ্রে বন্দরটিলা মাতৃসদনের নিচে-উপরে ও মূল কেন্দ্রে ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি।
এখানে লাইনে অপেক্ষমান হাজেরা বেগম নামে এক নারী বলেন, কেন্দ্রের বাইরে যে ভিড় তাতে করোনা মুক্তির জন্য টিকা নিতে আসলাম নাকি করোনা সঙ্গে করে নিতে আসলাম ঠিক বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে বন্দর ইপিআই জোনের জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. হাসান মুরাদ চৌধুরী বলেন, আমরা বারবার সরকার ঘোষিত টিকার এসএমএস ছাড়া কাউকে কেন্দ্রে না আসতে অনুরোধ জানাচ্ছি। সকল কেন্দ্রের সামনে ব্যানার-সাইনবোর্ড লাগিয়ে টিকা কেন্দ্রে ভিড় এড়াতে নিরুৎসাহী করছি। তারপরও জনসাধারণ টিকার এসএমএস না পেয়ে অনলাইনে নিবন্ধন করেই টিকা নিতে চলে আসছে। যার ফলে করোনাভাইরাস সংক্রমক ও করোনা উপসর্গ দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন। আর এই অবস্থার রোধ করা না গেলে চট্টগ্রামে ভয়াবহ রূপ নিবে করোনা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এ ব্যাপারে বারবার ঘোষণা দিচ্ছে ভিড়-জনসমাগম রোধ করা না গেলে করোনাভাইরাস অতিমাত্রাই সংক্রমিত হবে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জানান, একসঙ্গে অনেক মানুষ সমবেত হয়ে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সারাদিন টিকা দেয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এক সঙ্গে অনেকে ভিড় করছে। এরপরও সুশৃঙ্খলভাবে সবাইকে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও জানান, চট্টগ্রাম মহনগরী ও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মোট ৩২৬টি কেন্দ্রে করোনার গণটিকা কার্যক্রম চলছে। গতকাল শনিবার প্রথম দিন প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪১ ওয়ার্ডের ১২৩টি বুথে টিকাদান কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও চসিক করোনা ভ্যাকসিন প্রদান কমিটির সদস্য সচিব ডা. সেলিম আখতার চৌধুরী জানান, সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতি কেন্দ্রে ৩০০ জন করে টিকা নিতে পারছেন। তিনটি বুথে একদিনে ৯০০ জন টিকা পাবেন। এর বাইরে স্থায়ী ১১টি কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম চলমান আছে। কোন কেন্দ্রে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পেলে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি