May 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, February 20th, 2024, 7:54 pm

চট্টগ্রাম কারাগারে মৃত্যু, জেল সুপার-ওসিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রুবেল দে (৩৮) নামে এক বন্দিকে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ এনে সিনিয়র জেল সুপার ও বোয়ালখালী থানার ওসিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে আদালতে।

মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে এ মামলার আবেদন করেন কারাগারে নিহত রুবেলের স্ত্রী পুরবী পালিত।

আদালত মামলার আবেদন জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রেখেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন— চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, জেলার মোহাম্মদ এমরান হোসেন মিয়া, ডেপুটি জেলার নওশাদ মিয়া, মো. আখেরুল ইসলাম, সুমাইয়া খাতুন, ইব্রাহিম, বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসহাব উদ্দিন, একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সাইফুল ইসলাম, উপপরিদর্শক আবু মুসা, মো. সাইফুল ইসলাম, রিযাউল জব্বার, ডিউটি অফিসার, কনস্টেবল কামাল, আসাদুল্লাহ ও কারাগারের ওয়ার্ড মাস্টার। বাকি দুই আসামির নাম জানা যায়নি।

মামলার আবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদিপক্ষের আইনজীবী অজয় ধর বলেন, ‘গত ৪ জানুয়ারি ষষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত জেল সুপারকে আমার মক্কেল রুবেলের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। আর রাতেই তার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। জেল সুপার এই দায় এড়াতে পারেন না, কারণ আমার মক্কেল পুলিশ হেফাজতে পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন।’

আজ (মঙ্গলবার) সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন, বোয়ালখালী থানার ওসিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার আবেদন করেছেন রুবেলের স্ত্রী পুরবী পালিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ এর ১৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত মামলার আবেদন জমা নিয়ে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী শুনানির জন্য তারিখ দেবেন বলেছেন।’

বাদী তার মামলার আবেদনে উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি বিকাল ৩টার দিকে বোয়ালখালী উপজেলার দক্ষিণ জৈষ্ট্যপুরার নিজ বাড়ি থেকে থানার ওসির নির্দেশে উপপরিদর্শক এস.এম আবু মুসা, চৌকিদার জয় চক্রবর্তী এবং ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য চৌধুরী মো. হাসান চৌধুরীর সহযোগিতায় বিনা কারণে গ্রেপ্তার করে রুবেল দে কে। এরপর অভিযান পরিচালনা করে তাকে রাত ৮টার দিকে মদসহ অবস্থান করার তথ্যে গ্রেপ্তার করার ভুয়া মামলা সাজায়। ওইদিন রাত ৯টার দিকে পুলিশ কল করে রুবেল দে’ কে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য তার পরিবারের কাছে ২ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। টাকা না দিলে ৫০০ লিটার চোলাই মদ দিয়ে মিথ্যা মাদক মামলা সাজিয়ে চালান দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়।

ওই আবেদনে আরও বলা হয়, ভুক্তভোগী রুবেলের পরিবার এত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে আসামিরা ২০০ লিটার চোলাই মদ উদ্ধারের মিথ্যা এজাহার প্রস্তুত করে থানায় বসে ভুয়া জব্দ তালিকা তৈরি করেন। একজন আসামি নিজে বাদী হয়ে বোয়ালখালী থানায় রুবেলের নামে মিথ্যা মামলা রুজু করেন। পরদিন বোয়ালখালী থানার উপপরিদর্শক রিযাউল জব্বার রুবেল দে’র শারীরিক আঘাতের কথা গোপন রেখেই তাকে আদালতে সোপর্দ করেন। আদালত রুবেলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় প্রিজনভ্যানে করে তাকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এরপর ২ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুবেলের পরিবার সাক্ষাৎ করার জন্য কেন্দ্রীয় কারাগারে গেলে দেখতে পান, কারারক্ষীরা মুমূর্ষু অবস্থায় রুবেলকে হুইল চেয়ারে করে নিয়ে এসেছেন। এ সময় তারা দেখতে পান রুবেলের কপালে, ডান চোখের ভ্রুয়ের উপর রক্তাক্ত কাটা জখম, মুখ দিয়ে অনবরত লালা ঝরছে, সারা মুখমনণ্ডলে নীল ফোলা জখম হয়ে আছে এবং প্রচণ্ড আহত ও নিস্তেজ অবস্থায় মাথা হেলিয়ে পড়ে আছে। এমনকি কথা বলার কোনো শক্তি বা অবস্থা তার মধ্যে ছিল না। এমন অবস্থার কারণ জানতে চাইলে কারারক্ষীরা কোনো জবাব দেননি।

—-ইউএনবি