April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, January 9th, 2023, 7:26 pm

চট্টগ্রাম বন্দরের জেটি ফাঁকা, আমদানি-রপ্তানিতে ভাটা

ফাইল ছবি

দেশের আমদানি রপ্তানির প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে নতুন বছরের শুরুতেই অনেকগুলো জেটি ফাঁকা পড়ে আছে। এর মধ্যে খোলা পণ্য নামানোর জেটি যেমন আছে, তেমনি আছে কনটেইনার জেটিও।

বহির্নোঙরে পণ্যবাহী জাহাজ অপেক্ষমাণ না থাকায় বন্দরের ১৮টি গুরুত্বপূর্ণ জেটির মধ্যে সাতটিই এখন জাহাজের অপেক্ষায় বসে আছে।

এছাড়া বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগে বন্দরে জেটিতে ভেড়ার অপেক্ষায় থাকতে হতো বিদেশি জাহাজকে। কখনও কখনও তিন থেকে ১৫ দিনও অপেক্ষা করতে হয়েছে। বর্তমানে সেই চিত্র নেই।

বহির্নোঙরে অপেক্ষা না করেই সরাসরি জেটিতে ঢুকছে জাহাজ। এর পরও শূন্য থাকছে জেটি।

বছরের শুরুতে এমন পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে ব্যবসায়ী ও বন্দর সংশ্লিষ্টদের।

প্রায় সাড়ে ৩১ লাখ একক কনটেইনার ওঠানামা দিয়ে ২০২২ সাল শেষ করেছে চট্টগ্রাম বন্দর।

আগের বছরের তুলনায় দুই শতাংশ কনটেইনার ওঠানামা কমেছে এই বন্দরে। আর খোলা পণ্য ওঠানামা বেড়েছে আড়াই শতাংশ।

জেটি খালি থাকায় একদিকে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানের সময় কমছে, রপ্তানি পণ্য পরিবহনের খরচ কমছে, লিড টাইমে রপ্তানি সম্ভব হচ্ছে, জাহাজের বাড়তি অবস্থান সময় কমে যাওয়ায় বড় অঙ্কের ডলারও সাশ্রয় হচ্ছে।

আবার জাহাজের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন শিপিং এজেন্টরা।

বিদায়ী বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস (টুয়েন্টি ফুট ইক্যুয়েভেলেন্ট ইউনিট) কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। যা আগের বছরের তুলনায় ৭২ হাজার ৪৪ টিইইউস কম।

২০২১ সালে হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস। অবশ্য ২০২২ সালে সর্বোচ্চ জাহাজ ভিড়েছে চার হাজার ৩৬১টি।

২০২১ সালে ভিড়েছিল চার হাজার ২০৯টি জাহাজ। খোলা পণ্য হ্যান্ডলিংও বেড়েছে। তবে বাণিজ্যিক আমদানি কমার কারণে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং কমে যায়।

ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। জাহাজ আগমন কিছুটা কমেছে বলে জানিয়েছে বন্দর কর্মকর্তারা।

তবে জেটি শূন্য থাকার বিষয়টি এখনও সরাসরি স্বীকার করতে নারাজ তারা। তাদের মতে, জাহাজ আগমনের অপেক্ষায় থাকার সময় খালি থাকছে।

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, ‘পণ্য ওঠানামা কমেছে কি না সেটি জানতে মাসের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর জেটি ফাঁকা থাকার মূল কারণ হচ্ছে, পণ্য ওঠানামায় বন্দরের দক্ষতা বৃদ্ধি। দ্রুততম সময়ে জাহাজে পণ্য ওঠানামা শেষ করায় বেশি জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হচ্ছে। আর এতে কনটেইনার জাহাজকে অপেক্ষমাণ থাকতে হচ্ছে না।

জানা গেছে, এক বছর আগেও একটি কনটেইনার জাহাজকে তিন দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা অপেক্ষায় থেকেই বন্দর জেটিতে ঢুকতে হতো। বিদেশি শিপিং লাইনগুলো চট্টগ্রাম বন্দর অভিমুখে জাহাজ ভাড়া নিতে এই তিন দিন সময় বিবেচনায় নিয়েই হিসাব-নিকাশ করত।

এছাড়া এখন তাদের অনেক সময় ও অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের চিফ অপারেটিং অফিসার ক্যাপ্টেন তানভীর হোসাইন ইউএনবিকে বলেন, এক বছর আগেও জেটিতে ভিড়তে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হতো। এরই মধ্যে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজনে অপারেশনাল কার্যক্রমে গতি এসেছে। এখন বহির্নোঙরে অপেক্ষা ছাড়াই জেটিতে জাহাজ ভিড়ছে।

তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে জেটি খালিও থাকছে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ ইউএনবিকে বলেন, অপেক্ষা ছাড়া জেটিতে জাহাজ ভিড়তে পারায় ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। চট্টগ্রাম বন্দরের আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন ও দক্ষতা বৃদ্ধির কারণে এটি সম্ভবত হচ্ছে। ২০২২ সালেও বন্দরে জাহাজ বেশি ভিড়েছে; তবে বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে সামনে কমে যাওয়ার আশঙ্কা খুব বেশি।

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে।

আমরা চাই এ সংকট থেকে পুরো বিশ্ব দ্রুত মুক্তি পাক।

—ইউএনবি