সাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিজস্ব ‘অ্যালার্ট ৩’ জারিসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত ২২টি জাহাজকে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের উপর নির্ভর করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ কী কী ব্যবস্থা নেবে তা নির্ধারিত আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে যাতে বন্দর চ্যানেল, জাহাজ, হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট, কার্গো ও কনটেইনারের ক্ষতি না হয় সেই ব্যবস্থা নিয়ে থাকে। বর্তমানে বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট- ৩’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেতের জন্য এ অ্যালার্ট জারি করা হয়। সকাল ১১টায় বন্দর ভবনে কর্মকর্তাদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। ‘হামুন’ উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি বাড়তে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
এদিকে দমকা হাওয়ার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছ থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে ঘূর্ণিঝড়টি সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে 8৪৫ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪১০ কিলোমিটার পশ্চিম-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩২৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বন্দরে পাইলটের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টার বিশেষ কনট্রোল রুমে খোলা হয়েছে। বন্দরের মেরিন ডিপার্টমেন্ট নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের সহায়তায় বন্দর চ্যানেল ও জেটি থেকে ছোট বড় সব জাহাজ বহির্নোঙরে কিংবা শাহ আমানত সেতুর পূর্বপাশে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বন্দরের নিজস্ব ছোট জাহাজ-নৌযানগুলো জেটিতে বাঁধা হচ্ছে। কি গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি) সহ সব কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট পর্যায়ক্রমে প্যাকিং করা হচ্ছে। খালি কনটেইনারগুলো নিচে বা নিরাপদে রাখা হচ্ছে। বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জেটি, টার্মিনাল ও ইয়ার্ডে পূর্বনির্ধারিত ডেলিভারি কার্যক্রম চলছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (ক্রমিক ১০) চট্টগ্রাম ও পায়রা বন্দরকে ৭ নম্বর, কক্সবাজারকে ৬ ও মোংলা বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা, সচেতনতামূলক মাইকিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি