November 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, February 1st, 2022, 7:54 pm

চলতি বছরেই চালু হবে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার অংশ এ বছর ডিসেম্বর নাগাদ খুলে দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মূল লেনের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। আর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সংলগ্ন কাওলা থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত দৈর্ঘ্য সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এই অংশটি চলতি বছরের ডিসেম্বরে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সেতু কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ কাজ শেষ হলে বিমানবন্দর থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যাবে যাত্রাবাড়ী। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসে বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও রেলগেট পর্যন্ত অংশ খুলে দেওয়া হবে। এই অংশের কাজের অগ্রগতিও ভালো। বনানী পর্যন্ত অংশের অগ্রগতি ৭৬ শতাংশ। এ ছাড়া বনানী থেকে তেজগাঁওয়ের অগ্রগতি ৫০ শতাংশ। মূল কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে ১০ মাসের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রথমে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বিমানবন্দর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত শতভাগ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর খুলে দেওয়া হবে। কিন্তু নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় রেখে চলতি বছরেই সাড়ে ১১ কিলোমিটার খুলে দেবে সরকার। বাকি ৮ দশমিক ২৩ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হবে পরের বছর। প্রকল্প পরিচালক এএইচএমএস আকতার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, চলতি বছরেই সাড়ে ১১ কিলোমিটার খুলে দেওয়া হবে। এই অংশের কঠিন কাজ শেষ পর্যায়ে। পিলার ও ভায়াডাক্ট অধিকাংশ স্থানে বসে গেছে। হাতে সময় এখনো ১০ মাসের বেশি আছে। এই সময়ে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে। তিনি আরো বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় রেখেই বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও অংশ খুলে দেবো। তেজগাঁও অংশ পর্যন্ত খুলে দিলে নগরীর জটলা অনেকটা কমে যাবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (কুতুবখালী) পর্যন্ত উড়াল সড়কে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আট হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। নির্মাণের সুবিধার্থে প্রকল্পটি তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম অংশ বিমানবন্দর-বনানী-রেলস্টেশন পর্যন্ত এর মোট দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। এ অংশের অগ্রগতি ৭২ শতাংশ। দ্বিতীয় অংশে প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। বনানী রেলস্টেশন-মগবাজার অংশের অগ্রগতি ২৬ শতাংশ পর্যন্ত। এবং তৃতীয় অংশের মোট দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, উড়ালসড়ক বাস্তবায়নের পর ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি হেমায়েতপুর-কদমতলী-নিমতলী-সিরাজদিখান-মদনগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক-মদনপুরে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করবে। উড়ালসড়ক শুধু বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী রুটের যাত্রীদেরই স্বস্তি দেবে না, একইসঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল ও পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করতে সহায়তা করবে। উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলো ঢাকাকে বাইপাস করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। এতে ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী অংশে নিরসন হবে যানজট। প্রকল্পটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ অথরিটির (পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। পিপিপি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। যেখান থেকে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে অন্যতম সফলতা হিসেবে দেখছে পিপিপি। পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সচিব সুলতানা আফরোজ বলেন, সরকারের উন্নয়ন বেগবান করতে কাজ করছে পিপিপি। পিপিপির সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। দেশের উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প নিচ্ছে। চলতি বছরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে উন্মুক্ত করা অন্যতম সফলতা হিসেবে দেখছে পিপিপি। জানা গেছে, রাজধানীর যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়ে শহরের উত্তর-দক্ষিণ সংযোগকারী এই উড়ালসড়কের প্রকল্পটি সরকার হাতে নিয়েছিল ২০১১ সালে। প্রকল্প হাতে নেওয়ার পর নানা জটিলতায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়ালসড়ক) কাজ আটকে ছিল। ২০১৩ সালে প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি হলেও কাজ শুরু হতে আরও সাত বছর গড়িয়ে যায়। তবে প্রকল্প পরিচালক জানান, কাজ শুরু হওয়ার পর এগিয়েছে ‘তড়তড়িয়ে’। মহামারীর মধ্যেও হয়েছে কাজ। সাখাওয়াত আখতার বলেন, প্রকল্পটি হাতে নেওয়ার পর ভূমি অধিগ্রহণ, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে। এর মধ্যেই হানা দেয় মহামারী। তবে মহামারীর মধ্যেও কাজ থেকে থাকেনি। প্রকল্পের চুক্তি হওয়ার পর কাজ শুরু হতে সাত বছর দেরি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রকল্পের একটা বড় বাধা ছিল ভূমি অধিগ্রহণ। প্রকল্পের ২১০ একর জমির মধ্যে রেলের জমি ১২৮ একর, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৭ একর। সাধারণ মানুষের ২৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বাকি জমি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের। তিনি বলেন, এসব জমি অধিগ্রহণ করে ঘর-বাড়ি স্থাপনা ভেঙে প্রকল্পের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে অনেক সময় লেগে গেছে। এর বাইরে প্রকল্পের অর্থের সংস্থানের একটা বিষয়ও ছিল। পরবর্তীতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো চীনা দুটি ব্যাংক থেকে ৮৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ঋণ নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করে। প্রকল্পের ২৭ শতাংশ অর্থাৎ দুই হাজার চারশ ১৩ কোটি টাকা (ভিজিএফ) দেবে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর দিয়াবাড়ীতে সাড়ে তেরশ ফ্ল্যাট তৈরি করা হচ্ছে। এসব ফ্ল্যাট বাজারদরের চেয়ে কমমূল্যে ক্ষতিগ্রস্থদের দেওয়া হবে বলেও জানান প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ফাস্ট ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানির মালিকানার ৪৯ শতাংশ ব্যাংককভিত্তিক ইতালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির হাতে। বাকি অংশের মধ্যে ৩৪ শতাংশের মালিকানা চায়না শ্যাংডং ইকোনমিক অ্যান্ড টেকনিক্যাল করপোরেশনের (সিএসআই) হাতে। ১৫ শতাংশের মালিক আরেক চীনা কোম্পানি সিনো হাইড্রো। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় ঠিকাদারদের সঙ্গে সরকারের চুক্তি ২৫ বছরের। এর মধ্যে সাড়ে তিন বছর নির্মাণকাল। বাকি সাড়ে ২১ বছর টোল আদায় করবে অংশীদার প্রতিষ্ঠান। সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে বলা আছে একনাগাড়ে ১৫ দিন উড়ালসেতুর ওপর দিয়ে সাড়ে ১৩ হাজার যানবাহন না চললে চুক্তির অতিরিক্ত আরও ১৫ দিন টোল আদায়ের সুযোগ পাবে অংশীদাররা।