চাঁদপুরে বন্যায় ও অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে ৪৪টি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সময়ে কচুয়া, শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, সদর ও হাইমচর উপজেলায় ১৯২ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এতে প্রাথমিক ক্ষতি প্রায় ৪০ কোটি টাকা। তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের পিপলকড়া গ্রামের কৃষক শহীদ উল্লাহ বলেন, বানের পানিতে সড়কের পাশাপাশি আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। সড়কে গর্ত হওয়ার কারণে যানবাহন চলাচল এখন ঝুঁকিপূর্ণ।
শাহরাস্তি উপজেলার উনকিলা গ্রামের মনির হোসেন বলেন, এলাকায় বানের পানিতে বহু সড়ক তলিয়েছে। এসব সড়ক ভেঙে এখন বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। তবে কিছু সড়ক আগে থেকে ভাঙা ছিল। এখন আরও বেড়েছে।
সদরের বালিয়া ইউনিয়নের ঢালীরঘাট-ফরক্কাবাদ সড়কের বাসিন্দা আব্বাস মিয়া, কলেজ ছাত্র কিরন পাটোয়ারি ও মফিজুল ইসলাম খান ইউএনবিকে জানান, টানা বৃষ্টির কারণে সড়ক যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি মাটি নরম হয়ে বড় বড় গাছ উল্টে পড়েছে। দুর্ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার মানিকরাজ গ্রামের মোক্তার হোসেন ও মদনেরগাঁও গ্রামের বিল্লাল হোসেন গাজী জানান, টানা বৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন অংশে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সড়কের দুই পাশের অংশগুলো বেশি ভেঙেছে। কিছু এলাকায় বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. সাফায়েত আহম্মদ সিদ্দিকী ইউএনবিকে বলেন, এ বন্যায় জেলায় আমন ফসল, বীজতলা, পানখেত, আখখেত, শাক-সবজি, ফলফলাদি ও গাছ-গাছালির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮৭ কোটি টাকা।
কৃষি বিভাগের কৃষিবিদ মোবারক হোসেন বলেন, এ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা ৪৮ হাজার। এ জেলায় কোনো কৃষকের শস্য বিমাও নেই।
পৌরসভার নির্বাহি প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দোহা বলেন, চাঁদপুরে অতিবৃষ্টির কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বেহাল। ফলে জনভোগান্তি চরমে।
তিনি আরও বলেন, জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামতের জন্য প্রায় এক কোটি টাকা প্রয়োজন। চাহিদা পাঠানো হয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আহসান কবির ইউএনবিকে বলেন, বন্যার পানি কমছে। এখনও বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতাও রয়েছে। আমরা গ্রামীণ সড়ক ও কালভার্টের ক্ষতির পরিমাণ এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত করিনি। তবে প্রাথমিকভাবে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছি। এছাড়া এই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
কচুয়া স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের উপজেলা প্রকৌশলী আলিম হোসেন লিটন ও শাহরাস্তির উপজেলা প্রকৌশলী পারভেজ সারওয়ার জানান, চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। যে কারণে এই ৩ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ পাকা সড়ক পানির নিচে প্রায় এক মাস। সড়কের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় এবং যানবাহন চলতে গিয়ে সড়কগুলো ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর চাঁদপুর নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, বন্যা ও জলাবদ্ধতায় সদরে ১২টি, হাইমচরে ১০টি, হাজীগঞ্জ ৪৫টি, কচুয়ায় ২২টি, শাহরাস্তিতে ৫৩টি এবং ফরিদগঞ্জে ৫০টি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৬ উপজেলায় কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪৪টি।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি