September 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Thursday, January 4th, 2024, 7:45 pm

চাঁদপুরে ‘বাকবাকুম’ শব্দে মুখরিত বাবুরহাট কবুতর বাজার

শত শত কবুতরের সমাহার চাঁদপুরের বাবুরহাটে অবস্থিত কবুতর বাজারে। জেলার সবচেয়ে বড় কবুতরের সমাহার হয় শতবষের্র পুরনো ও সমৃদ্ধ চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থতি বাজারটিতে।

সাপ্তাহিক হাট বা বাজারের দিনগুলোতে জেলা শহরের বিপনীবাগ, সদরের বাবুরহাট, শাহতলী বাজার, বিষ্ণুপুর বাজার, মহামায়া বাজার, পুরান বাজার, ছোট সুন্দর, বাগড়া, বাগাদী, চান্দ্রা বাজার, পশ্চিম চান্দ্রা বাজার, বহরিয়া, বাংলাবাজার, হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজার, মতলব দক্ষিণের মুন্সীরহাট বাজারেও প্রচুর কবুতর বিক্রি হয়।

কিন্তু বাবুরহাট বাজারের কবুতর বাজারে শত শত কবুতর বিক্রি হয়। সাপ্তাহিক বাজারের দিন বৃহস্পতিবার ও রবিবার। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বিকিকিনি। এমনটাই জানিয়েছেন প্রবীণ কবুতর বিক্রেতা হাবিবুল্লা খান (৬০), কামাল পাটোয়ারি (৫৮) ও সিদ্দিকুর রহমান (৫৬)।

সদর ও আশপাশের উপজেলা মতলবের মুন্সীরহাট ও বরদিয়া, ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা বাজার ও হাজীগঞ্জসহ প্রত্যন্ত এলাকা থেকে হাটের দিনগুলোতে প্রচুর কবুতর আসে এ বাজারে। এ দু’দিন কমপক্ষে ৮-৯ লাখ টাকার কবুতর বিকিকিনি হয় বলে জানান তারা।

অনেক উদ্যমী যুবক ও কলেজের ছাত্ররাও বাজারে তাদের বাসা-বাড়ি ও নিজস্ব ছোট-বড় খামারে পালিত কবুতর নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। আবার অনেক যুবক শখের বসে কবুতর পালার জন্য এখানে কবুতর কিনতে আসেন বিভিন্ন এলাকা থেকে।

শখের বসে ও বাড়তি আয়ের উদ্দেশ্যে কবুতর পালন করা কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, এ কাজে বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। প্রতিমাসেই বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করা যায়।-

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাজীগঞ্জের ইমন বলেন, বাড়তি আয় দিয়ে তারা নিজেদের পকেটমানি ও পড়ালেখার খরচ চালান- এমনটাই জানান এক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইমন।

কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অবসরে ও ছুটির দিনে অর্থ যোগান দিতে বাড়িতে সে কবুতর ও হাঁস-মুরগি প্রতিপালন করছেন। বিড়াল, কুকুর, ময়না, টিয়া পালন করতেন আগে। এসব ক্ষেত্রে খাবারের খরচ বেশি। তাই ওসব প্রায় বাদ দিয়েছেন।

বাবুরহাট বাজার এলাকার কলেজ (এইচএসসি) শিক্ষার্থী কামরুল বলেন, ৩ জোড়া কবুতর নিয়ে এসেছেন এ বাজারে। বাড়িতে আরও ১০-১২ টি কবুতর আছে। শখের বসে কবুতর পালন করছেন। পকেট খরচ হয়ে যায়, কবুতর পালনে আনন্দও পান তিনি।

জেলা শহরের কোড়ালিয়া এলাকা থেকে রাকিবুল ইসলাম ও নইমুল ইসলাম গুয়াখোলা এলাকা থেকে নিজেদের পালিত খাঁচায় করে ২০-৩০টি কবুতর বিক্রি করতে এনেছেন এ বাবুরহাট বাজারে।

তরুণ ব্যবসায়ী জাহিদ হোসেন (৩৫) জানান, তিনি নিজেও শহরের হাজী মোহসীন রোডের বাড়িতে কবুতর পালন করেন এবং তা বিক্রি করেন এ বাজারে।

আ. রহমান (৫৫), সিদ্দিক, কামাল পাটোয়ারি, হারুন, দুলাল, রনি, হাবিবুল্লাহ খানসহ (৬০) আরো অনেকে এখানে কবুতর বিক্রি করেন।

সিদ্দিক ও কামাল জানান, তারা এ বাজারে প্রায় ৪০ বছর ধরে কবুতর বিক্রি করেন। দৈনিক ৪-৬ হাজার টাকা আয় হয়।

তারা বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় কবুতর বাজার হলো বাবুরহাটের ‘বাকবাকুম কবুতর বাজার’।

বিভিন্নস্থান থেকে এখানে সারা দিন ২ শতাধিক কবুতর বিক্রেতা আসেন। কয়েক হাজার ক্রেতাও আসেন কবুতর কিনতে। সদরের শাহতলী থেকে এসেছেন যুবক ইকরাম প্রধানীয়া ও ইমন। তারা নিজ নিজ বাড়িতে শখের বসে কবুতর পালন করছেন।

কবুতর কয়েক প্রজাতির হয়ে থাকে। দেশি, ময়ূর কবুতর, ম্যাগপাই, হুমা, রাইচার, বোম্বে, গিরিবাজ, সিরাজি প্রজাতির কবুতর বাজারে দেখা যায়। এলাকাভেদে সেগুলোর নামও ভিন্ন হয়ে থাকে।

গিরিবাজ কবুতর জোড়া ৭০০ টাকা । দেশীয় কবুতর জোড়া ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কবুতরের বাচ্চা জোড়া ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।

ঘুরে ঘুরে দেখা গেছে, কবুতরের দাম অনেকটা একই রকম মুন্সীরহাট (মতলব দক্ষিণ), মহামায়া, ছোট সুন্দর, পুরান বাজার, বউ বাজার, বিষ্ণুপুর, জেলা শহরের পালবাজার, বিপনীবাগ বাজার ও ওয়ারল্যাস বাজারে।

সদরের আশিকাটি ইউনিয়নের মান্দারি গ্রামে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের পাশেই নিজ বাড়িতে পারভিন ইসলাম ৪-৫টি কবুতর নিয়ে কয়েক বছর আগে লালনপালন শুরু করেন। এখন তার বাড়িতে সারাক্ষণই বাকবাকুম শব্দে মুখরিত থাকে।

তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় এখন প্রায় ৫০ জোড়া বিভিন্ন প্রজাতির কবুতর রয়েছে। খরচ বাদে মাসে আমার প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে।’

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মো. বখতিয়ার আলম বলেন, জেলার ৮ উপজেলায় প্রায় ৫০০টি কবুতরের ছোট-বড় নিজস্ব খামার রয়েছে। এসব খামারে প্রতিমাসেই বাচ্চা ফুটানো হয়।

তিনি বলেন, ‘কবুতর ও কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে অসংখ্য নারী-পুরুষ এবং যুবক বয়সীরাও বেশ টাকা উপার্জন করছেন। কবুতর পালনে পুঁজি কম লাগে। এটি একটি লাভজনক সেক্টর।’

—–ইউএনবি