May 11, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, December 5th, 2022, 7:33 pm

চাঁদপুরে ৩৯টি লবণ মিলই বন্ধ, বেকার হাজারো দিনমজুর

ফাইল ছবি

চাঁদপুর জেলার বিখ্যাত ব্যবসা কেন্দ্র পুরানবাজার সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই কর্মাশিয়াল হাব হিসেবে খ্যাত। এর পাশেই নৌ, সড়ক ও রেলপথ থাকায় ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার লাভ করেছে। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকা এখানে লেনদেন হয়। এখান থেকে পাইকারি দরে লবণসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনে জেলার খুচরা ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাণিজ্য করছেন।

এক সময়ে লবণ শিল্প ও লবণ ব্যবসা ছিল জমজমাট। সারাদিনই গম-গম আওয়াজ হতো এসব মিল কারখানায়। প্রতিদিন শত শত দিনমজুর জীবিকা করতো এসব মিলে কাজ করে। এখানে নদীর পাড়ে পাড়ে ৪০টি লবণ মিলে প্রতিদিন টনে টনে লবন উৎপাদন হতো আর প্যাকেটজাত করে পাঠানো হতো জেলা ও জেলার বাইরে শরিয়তপুর, ডামুডা, সুরেশ্বর, মতলব, গজারিয়া, ষাটনলসহ দূর দুরান্তের বিভিন্ন বাজারে নৌপথ ও সড়কের যানবাহনে।

কিন্তু কালের চক্রে আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন রাজধানীসহ বড় নগরীতে বড় বড় শিল্প কারখানায় আরও উন্নত প্যাকে উন্নতমানের রিফাইন্ড লবণ জেলা উপজেলার হাট-বাজারে ও দোকানের দ্বারপ্রান্তে নিজস্ব যানবাহনে পৌঁছে দেয়ায় পুরানবাজারের এ লবণ ব্যবসায় নেমেছে ব্যাপক ধস। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সব মিল ও লবণ ব্যবসা। এটা গত এক দশকের দৃশ্য–জানান ব্যবসায়ীরা।

বেকার হয়ে গেছে হাজারো দিন মজুর। প্রতিটি মিলে কাজ করতো একশ’ বা তার কিছু বেশি দিনমজুর। এখন এসব মিলগুলো পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। পুরানবাজারে ঘুরে ঘুরে দেখলাম এসব লবণ মিলগুলি এখন বন্ধ, তালা মারা, যেনো ভুতড়ে গলি।

মেঘনা-ডাকাতিয়ার মোহনায় নদীর পাড়ে পুরানবাজারে জনতা সল্ট মিলের স্বত্বাধিকারী একে আজাদ ইউএনবিকে জানান- জেলার প্রসিদ্ধ ব্যবসা কেন্দ্র পুরানবাজারে শুধু তার মিলটিই কোন রকমে টিকে আছে। পুরানবাজারে ৪০টি লবণ মিল ছিল। ব্যবসা ছিল জমজমাট। এখন ৩৯টি লবণ মিলই বন্ধ।

তিনি বলেন, ‘কমপিটিশন মার্কেটে, অনেক কষ্ট হচ্ছে টিকে থাকতে। শতাধিক দিনমজুর এখানে কাজ করছেন। দুই ধরনের লবণ এখানে উৎপাদন হয়। আমাদের জন্য আয়োডিনযুক্ত লবণ আর গো-খাদ্যের জন্য সাধারণ লবণ।

দিনমজুর হারুনর রশীদ, বাবুল মিয়া, বশির গাজীসহ অনেকেই জানান, আগে শত শত দিনমজুর ৩৯টি মিলে কাজ করতো। কত ব্যস্ত ছিল লবণ মিল এলাকাগুলো! র্দীঘনি:শ্বাস ফেলে এক লবণ শ্রমিক বললেন, ‘কোথায় গেলো সেই দিনগুলো! বেকার সব দিনমজুররা এখানে সেখানে কাজ করছে। কেউ কেউ না ফেরার দেশেও চলে গেছে।

কথা হলো প্রবীণ লবণ ব্যবসায়ী ও পুরানবাজারে অবস্থিত চাঁদপুর চেম্বার অব কর্মার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সভাপতি আলহাজ্ব জাহাংগীর আখন্দ সেলিমের (৭৫) সঙ্গে। একান্ত আলাপনে তিনি বলেন, পুরানবাজার নদী ভাঙন প্রবণ এলাকা হওয়ার কারণে, কাঁচামালের তীব্র সংকট, ব্যাংক লোন না দেয়া /না পাওয়া ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে চেষ্টা থাকা সত্বেও ব্যবসায়ীরা লবণ ব্যবসায় এগুতে পারেনি। তাছাড়া, কাংখিত লাভও হচ্ছিল না। উর্পযুপরি লস/ লোকসান হচ্ছিল। হতাশ ও নিরাশ হয়ে লবণ ব্যবসায়ীরা একে একে তাদের লবণের ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে থাকেন। ফলে গত ৮/১০ বছরে লবণ শিল্প ও কারখানাগুলিতে তালা ঝুলছে। বেকার হয়ে গেছে হাজারো দিনমজুর। এরা আর সুদিন দেখবে বলে মনে হচ্ছে না। এসব লবণ মিল এখন পরিত্যক্ত বা গোডাউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার কবে লবণ শিল্প সমৃদ্ধ হবে বা আদৌ লবণ মিলগুলো আবার চালু হবে কি না-তা কেউ জানে না। এমনকি তাঁর নিজের লবণ মিলও বন্ধ ও পরিত্যক্ত।

—-ইউএনবি