November 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, May 8th, 2022, 9:18 pm

চাঁদার বিনিময়ে মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহন

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর নির্দেশনার তোয়াক্কা না করেই চাঁদার বিনিময়ে মহাসড়কে অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহন। এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ওসব অবৈধ যানবাহন দেশের ২২ মহাসড়কেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আর তা থেকে চাঁদা বাবদ হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। খোদ রাজধানীতেই ওসব অবৈধ যানবাহন অবাধে চলাফেরা করছে। স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও অসাধু পুলিশ সদস্যদের নির্লিপ্ততার কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। মূলত সংশ্লিষ্টদের মোটা চাঁদা দিয়েই অবৈধ ওসব যানবাহন সড়কে চলছে। ফলে মহাসড়কে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে যানজট, দুর্ঘটনা ও মৃত্যু। দেশের মহাসড়কগুলোতে দেদারসে চাঁদাবাজি হচ্ছে। কোন কোন সড়কে চাঁদার বিনিময়ে অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে তার একটি তালিকাও পুলিশ বিভাগ করেছে। ঈদযাত্রা সামনে রেখে পুলিশ সদর দফতরের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদনে চাঁদাবাজিতে জড়িত পুলিশ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ বিভাগ এবং পরিবহন খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা, নসিমন, করিমনসহ স্থানীয়ভাবে নির্মিত যান্ত্রিক যানবাহন চলাচল একাধিকবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তারপর তা বন্ধ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে সম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর থেকে রেঞ্জের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি হাইওয়ে পুলিশকেও ওসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইন শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বৈঠকের সিদ্ধান্ত- এখন থেকে মহাসড়কে কোন অবৈধ যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। কিন্তুযানবাহন চালকরা মন্ত্রণালয় বা মন্ত্রীর কড়া হুঁশিয়ারিও আমলে নিচ্ছে না। বরং স্থানীয় থানা ও ট্রাফিক পুলিশের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশয়ে চলছে অবৈধ যানবাহন। সেজন্য ওসব যানবাহনের চালকরা প্রতিদিনই নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিচ্ছে।।
সূত্র জানায়, দেশের সবকটি মহাসড়কে দেদারসে অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। আর ওই যানবাহনগুলোর বেপরোয়া চলাচলের কারণে প্রায়ই নানা দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। গত এক বছরের ব্যবধানে মহাসড়কে যতোগুলো দুর্ঘটনা ঘটেছে তার সিংহভাগই টমটম, নছিমন বা ফিটনেসবিহীন যানবাহনের কারণে ঘটেছে। ওসব যানবাহন রাস্তা থেকে উঠিয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নিলেও প্রভাবশালী মহলের কারণে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আর বিপুলসংখ্যক অবৈধ যানবাহনের কারণে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই আছে। অথচ বিগত ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিক্সা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এমনকি একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশের কারণেই সড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করা যাচ্ছে না। লোক নিয়োগ করে তারা নিয়মিত অবৈধ যানবাহন থেকে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা আদায় করে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও জেলা-উপজেলার রাজনৈতিক নেতাদের কাছে ওই টাকার ভাগ যায়। বিষয়টি সরকারের হাইকমান্ডকে জানানো হয়েছে। মহাসড়কে চিরতরে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে অতিসম্প্রতি পুলিশ সদর দফতর থেকে রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদের কাছে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। আর জোরালো অভিযান চালাতে হাইওয়ে পুলিশকেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, সড়ক-মহাসড়কে নির্বিঘেœ অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। পুলিশ দেখেও না দেখার ভান করে। মহাসড়কে চলাচলকারী অবৈধ যানবাহনের চালকদের তথ্যানুযায়ী, থ্রি-হুইলার, অটোরিক্সা, নসিমন থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ৫০০ থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। টাকা তুলে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের পক্ষে তাদের লোকজন। টাকার বিনিময়ে মহাসড়কের ওপরই গাড়ি রাখতে পারে চালকরা। বর্তমানে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগের বসিলা, লালবাগ, কোতোয়ালি, বংশাল গ্যারেজে প্রায় ৫ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা রয়েছে। ওসব অবৈধ যানবাহন বিভিন্ন রুটে ভাড়ায় অবাধে চলছে। প্রতিদিন ওসব অবৈধ গাড়ি থেকে অর্ধকোটি টাকা চাঁদার টাকা এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ পুলিশ সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে রাজধানীতে প্রতিদিন প্রায় ৩ হাজার ইজিবাইক চলাচল করছে। ওসব ইজিবাইক থেকে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ এবং ট্রাফিক পুলিশের নাম করে প্রতি ইজিবাইক থেকে সাড়ে ৭শ’ টাকা করে নিয়মিত চাঁদা উঠানো হয়। আর চাঁদা দিতে কেউ অস্বীকৃতি জানালে তাকে থানা ও ফাঁড়ি পুলিশের মাধ্যমে গাড়ি জব্দসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়। ইজিবাইক একবার পুলিশ আটক করলে টাকা ছাড়া ছাড়ানোর কোন উপায় থাকে না। নতুবা মামলা বা রেকার করে ডাম্পিংয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাই ওসব ঝামেলা এড়াতে প্রতিটি ইজিবাইকের মালিক-চালক নিয়মিত লাইনম্যানকে নির্ধারিত চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাছাড়াও সায়েদাবাদ, গাবতলী, মহাখালীসহ রাজধানীর প্রতিটি প্রবেশপথে বিশেষ টোকেনের মাধ্যমে ফিটনেসবিহীন গাড়িগুলো চলাচলের বৈধতা দেয়া হয়েছে। টোকেনের মাধ্যমে প্রতি রাতেই পুলিশ ও স্থানীয় নেতারা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অভিযোগ রয়েছে-ফিটনেসবিহীন গাড়ির মালিকরা থানা পুলিশ, ট্রাফিক সার্জেন্ট ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার আঁতাত করেই গাড়ি চালাচ্ছে।
এদিকে মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচল বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মল্লিক ফখরুল ইসলাম জানান, মহাসড়কে থ্রি-হুইলারসহ সব ধরনের অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশের কোন সদস্যের বিরুদ্ধে ওসব যানবাহনের চালকদের কাছ থেকে কোন ধরনের চাঁদা আদায় করার প্রমাণ মিললে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
অন্যদিকে এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, মহাসড়কে কোন অবৈধ যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ কেউ না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঈদ কেন্দ্র করে রাস্তায় ওসব যানবাহনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।