November 19, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Sunday, September 17th, 2023, 3:32 pm

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে আম চাষে সফল শামীম

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে আম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা ও আম রপ্তানিকারক ইসমাইল খান শামীম।

সনাতন পদ্ধতির চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ফলন হয়েছে তার বাগানে। প্রতিটি গাছে ঝুলছে ফ্রুট ব্যাগিং করা থোকায় থোকায় আম। তার এই সাফল্য ব্যাপক সড়া ফেলেছে এলাকায়।

নতুন এই পদ্ধতিতে আম চাষ হচ্ছে জেনে অনেকেই দেখতে আসছেন তার বাগান। উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এই পদ্ধতিতে আম চাষে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা ও আম রপ্তানিকারক ইসমাইল খান শামীম। ৬ বছর আগে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কয়েমবাটরে গিয়ে আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে আম চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। সেখান থেকে ফিরে নিজ এলাকার একাডেমি মোড় এলাকায় ৫ বিঘা জমিতে এই নতুন পদ্ধতিতে গড়ে তোলেন কাটিমন জাতের আম বাগান।

প্রচলিত নিয়মে যেখানে এক বিঘা জমিতে ৮ থেকে ১২টি গাছ লাগানো আছে। সেখানে এই বাগানে সাড়ে ৯ ফুট বাই সাড়ে ৬ ফুট দূরত্বে ২২৪টি গাছ রোপণ করা হয়েছে। সারি সারি ছোট ছোট গাছে শোভা পাচ্ছে ফ্রুট ব্যাগিং করা প্রচুর আম।

শামীম বলেন, একটি জায়গার সর্বোচ্চ ব্যবহার করে অল্প সময়ে অধিক ফলন পেতে এই চাষ পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই। আগের নিয়মে একটি গাছ থেকে আরেকটি গাছের দূরত্ব অনেক বেশি ছিল। ফলে জমির এই ফাঁকা জায়গাটি পূরণ হতে সময় লেগে যেত ১০ থেকে ২০ বছর। অর্থাৎ এই ফাঁকা জায়গার ফলন পেতে দীর্ঘদিন সময় লাগতো।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু নতুন পদ্ধতিতে গাছের দূরত্ব কম হওয়ায় মাঝের জায়গাটি ৩ বছরের মধ্যে পূরণ হয়ে যায়। অর্থাৎ অল্প সময়ে সম্পূর্ণ জমি থেকে ফলন পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিতে গাছ লাগালে গাছের উচ্চতা নিয়ন্ত্রনে রাখা সম্ভব। এতে বাগানের পরিচর্যা সঠিকভাবে ও অল্প খরচে করা যায় এবং ফল আহরণও সহজ হয়।

শামীম বলেন, গাছ লাগানোর ৪ থেকে ৫ বছর পর পূর্ণাঙ্গ ফলন পাওয়া যায়। এবং স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ বেশি ফলন হয়। বর্তমানে আম পাড়া শুরু হয়েছে, এ পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ টাকার আম বিক্রি হয়েছে। প্রতি মণ আম ১০ হাজার টাকা দরে বিক্রি করছি।

তিনি আরও বলেন, বাগান গড়ে তুলতে ৫ বছরে যে খরচ করেছেন এ বছর তা উঠে আসবে এবং আগামী বছর থেকে লাভের মুখ দেখতে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

এদিকে নতুন এই পদ্ধতিতে আম চাষ হচ্ছে শুনে প্রতিদিনই শামীমের আম বাগান দেখতে আসছেন এবং অনেকেই উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন এই পদ্ধতিতে আম চাষে।

বাগান দেখতে আসা শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা চৌধুরীটোলা এলাকার আম চাষি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, এই নতুন পদ্ধতিতে আম চাষ দেখে আমি খুবই খুশি হলাম। এবং দেখতেও ভালো লাগল। একটা থেকে আরেকটা গাছের দূরত্ব বেশ কাছাকাছি। আর আমার যে বাগান আছে তাতে গাছের দূরত্ব অনেক বেশি। এই নতুন পদ্ধতিতে চাষ করলে কেমন লাভবান হব এই পরামর্শের জন্য শামীম ভাইয়ের কাছে এসেছি এবং শামীম ভাইয়ের কাছে পরামর্শ নিয়ে আমিও এই পদ্ধতিতে আম বাগান করব।

দাদনচক এলাকার আম চাষি সালাউদ্দিন বাগান দেখতে এসে বলেন, আমি শুনেছি শামীম ভাই নতুন ধরনের পদ্ধতিতে আম বাগান করেছে। আজ দেখতে এসেছি। আমি ঘুরে ঘুরে বাগানটি দেখলাম। এই অল্পজায়গায় এত গাছ। সারি সারি গাছ, এত ফলন দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমাদের আগের যে আম বাগান আছে সেগুলো বড় বড় গাছ, উচ্চতা অনেক। এক বিঘায় ৭টি বা ৮টি গাছ আছে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে যে এক বিঘায় অকেনগুলো গাছ, উচ্চতাও কম। আবার ফলনও খুব ভালো। আমার খুব ভালো লেগেছে। আমি এই নতুন পদ্ধতিতে একটি বাগান তৈরি করব।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতি অর্থাৎ অতি ঘন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিটি সাউথ আফ্রিকাতে প্রথম শুরু হয়। সেখান থেকে আস্তে আস্তে অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্প্রতি আমাদের দেশেও এই পদ্ধতিতে চাষ শুরু হয়েছে। সঠিক নিয়মে আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে চাষ করলে আম চাষিরা দ্বিগুণ ফলন পাবেন ও আরও বেশি লাভবান হবেন।

তিনি বলেন, আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে বাগান গড়তে সঠিক নিয়ম হলো- ৩মিটার বাই ৩মিটার অথবা ৩মিটার বাই আড়াই মিটার দূরে দূরে গাছ রোপণ করতে হবে। জুন মাসে সাধারণত গাছ রোপণ করা হয়। গাছ রোপণের ১ বছর পরে মাটি থেকে আড়াই থেকে ৩ ফুট উপরে গাছটি কেটে ফেলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, কেটে ফেলার পর এখানে অনেকগুলো কুশি বের হবে। সেখান থেকে ৩/৪টি কুশি রেখে বাকি গুলো ফেলে দিতে হবে। এই কুশিগুলো ঠিক পরবর্তী বছর মার্চ মাসে প্রথম কর্তন থেকে দেড় ফুট উচ্চতায় আবার দ্বিতীয় কর্তন করতে হবে। তাহলে পরবর্তীতে প্রত্যেকটি ডাল থেকে আবার ৪-৫টি করে কুশি বের হবে, তখন কিন্তু মোট ১৫ থেকে ২০টি কুশি বের হবে। ফলে ৪ ফুট উচ্চতায় অনেক গুলো কুশি পাওয়া যাচ্ছে। তখন এই গাছের বৃদ্ধি আস্তে আস্তে হবে। এবং যেহেতু ঘন বাগান, তাই ৩ বছরের মধ্যেই জমির ফাঁকা জায়গাটা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ৩ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ জমির ফলন পাওয়া যাবে।

বৈজ্ঞানিক এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আর যদি সনাতন পদ্ধতিতে চাষ হতো সে ক্ষেত্রে মাঝ খানের জায়গা পূরণ হতে প্রায় ১০ থেকে ১৫ বছর, এমনকি ২০ বছর সময় লেগে যেত। তাহলে মাঝখানের এই যে জায়গাটি ১৫ থেকে ২০টা বছর পড়ে থাকত। সেখান থেকে কোনো ফলন পাওয়া যেত না। যার কারণে অতি ঘন পদ্ধতিতে ফলন দ্বিগুণ, অনেক সময় দ্বিগুণেরও বেশি ফলন হয়। প্রতি বছর গাছটিকে এভাবে কাটতে হবে। তাহলে গাছ হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে। আর এতে একটি বাড়তি সুবিধা হলো যে গাছের প্রত্যেকটা আম হাতের নাগালে পাওয়া যাবে। এতে পরিচর্যা করা সহজ হবে। প্যাকেট পরানো সহজ হচ্ছে। এতে খরচও কমে যাচ্ছে। অন্যান্য খরচও কমে যাবে। আর আমের মান ভালো থাকায় আম চাষিরা আমের দাম ভালো পাবেন।

আলট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে লাগানো বাগান থেকে একটানা ২০ বছর পর্যন্ত ফলন

নেওয়া যাবে। ২০ বছর পর নতুন করে বাগান করতে হবে বলে জানালেন এই কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

এদিকে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-পরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, যারা আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে আম বাগান করছেন তাদেরকে আমরা প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি। এবং বিভিন্ন মাঠ দিবস বা কৃষকদেরকে নিয়ে যে উঠান বৈঠক করা হয় সেখানে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে, আপনারা যদি আম বাগান গড়ে তোলেন তাহলে আল্ট্রা হাইডেনসিটি পদ্ধতিতে গড়ে তোলেন। তাহলে আপনারা খুব অল্প সময়ে বেশি ফলন পাবেন এবং বেশি লাভবান হবেন।

—-ইউএনবি