November 16, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, March 6th, 2024, 7:54 pm

চাঁপাইনবাবগঞ্জে এবার কমেছে আমের মুকুল, লোকসানের আশঙ্কায় কৃষকরা

বৈরী আবহাওয়া ও আম উৎপাদনের জন্য চলতি বছর অনুকূল না হওয়ায় আমের জেলা খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে গাছগুলোতে মুকুল কম হয়েছে। মাঝারি আকারের আমগাছগুলোতে কিছুটা মুকুলের দেখা মিললেও বড় গাছগুলোতে অশানুরূপ নেই। ফলে লোকসানের চিন্তায় পড়েছেন জেলার আম চাষীরা।

কৃষি বিভাগ বলছে ,চলতি বছর একেতো অফ ইয়ার তার উপর শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় গত বছরের তুলোনায় এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মুকুল কম হয়েছে। তবে তাপমাত্রা বাড়ায় কিছু মুকল আসতে পারে।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই এক বছর আমের ফলন ভালো হলে পরের বছর ফলন কম হয়। যে বছর আমের ফলন বেশি হয় সেই বছরকে বলা হয় অন ইয়ার। আর পরবর্তি বছরকে বলা হয় অফ ইয়ার। আর এই নিয়মে চলতি বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের অফ ইয়ার। অর্থাৎ আম কম হবার বছর। তার উপর এবার আমের মুকুল ফোটার সময় শীতের প্রকোপ বেশি থাকার কারণে আম গাছে মুকল আসা ব্যাহত হয়েছে। ফলে আম গাছগুলোতে আশানুরূপ মুকুল আসেনি। আর এতেই চিন্তায় পড়েছেন আম চাষীরা।

নিজেদের উদ্বেগ জানিয়ে কৃষকরা বলছেন, মাঘ মাসের প্রথম থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত আম গাছে মুকুল আসার সময়। কিন্তু সেই সময়ে শীতের প্রকোপ বেশির কারণে আশানুরূপ মুকুল আসেনি। মুকুল কম আসায় দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার আরামবাগ এলাকার এক আম চাষী আব্দুর রাকিব বলেন, গতবার আমের অন ইয়ার গেছে। গতবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যাপক মুকুল হয়েছিল এবং আমও ভালো হয়েছিল। এবছর এমনিতেই অফ ইয়ার তার উপর যে সময়টায় মুকুল বের হবে এ সময়টাতে এত শীতের প্রকোপ ছিল। ফলে মুকুলটা পর্যাপ্ত পরিমাণ বের হয়নি।

এর মধ্যে যারা ঠিকমত পরিচর্যা করেছে তাদের কিছু কিছু যেমন আমার গাছে মুকুল মোটামুটি ৫০ শতাংশের উপর হয়েছে। আর যারা পরিচর্যা করতে একটু গড়িমসি করেছে তাদের মুকুল অতিরিক্ত কম হয়েছে এবং বড় গাছগুলোতে মুকুলের পরিমাণ খুবই কম বলে জানান তিনি।

রাকিব আরও বলেন, মাঝারি আকারের যে গাছগুলোতে মুকুল হালকা হালকা হয়েছে। আর পুরো জেলাতেই মুকুলটা এবার কম। যে পরিমাণ মুকুল বের হয়েছে এতে যদি আম হয় তাতে আমরা তেমন লাভের আশা করতে পারছি না, কারণ খরচ বেশি। এখন মুকুল আসার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং গাছে কচি পাতা বের হচ্ছে। তারপরও যে মুকুল এসেছে সামনে আবার ঝড় বৃষ্টি কত রকমের বালা আসতে পারে। এখন সেটা আল্লাহর উপর ভরসা করছি যদি আমটা হয় যাদের মোটামুটি মুকুল এসেছে তারা হয়তো জানে বাঁচবে, আর যাদের অনেক কম এসেছে তারা তো ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

একই এলাকার অপর এক আম চাষী মোহাম্মদ আলম বলেন, এবার মুকুলের খবর খুব খারাপ। কারণ গত বছর অনেক মুকুল হয়েছিল আমও অনেক হয়েছিল। কিন্তু এবার মুকুলের অবস্থা খারাপ, অনেক কম মুকুল এসেছে। যে সময়ে মুকুলটা বের হবে ওই সময়ে শীতটা বেশি ছিল। এ কারণে মুকুলটা খুব কম। কিছু ছোট ও মাঝারি আকারের গাছে মুকুল এলেও বড় গাছগুলোতে তেমন মুকুল আসেনি। এখন গাছে কচি পাতা বের হতে শুরু করেছে। মুকুল আসার আর আশা নাই।

সদর উপজেলার নশিপুর এলাকার আম চাষী বাবু বলেন, ৫০ হাজার টাকা দিয়ে খিরসাপাতা ও ল্যাংড়ার ৩০টি গাছ কিনলাম। আম গাছের গোড়ায় সার, ভিটামিন, সেচ দিলাম। যত্ন যা করার সব করলাম। কিন্তু এবার আবহাওয়া ভালো না থাকায় আশানুরূপ মকুল আসেনি। এত টাকা খরচ করে এখন যে সামান্য পরিমাণ মুকুল এসেছে তাতে ফলন কম হবে। আমার টাকা উঠবে কি না এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেছি। ফাল্গুন মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত মুকুল আসার সময় থাকে এখন তো আর মুকুল আসার সম্ভাবনা নাই। দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছি।

একই এলাকার চাষী নুরুল ইসলাম বলেন, ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে ৯০ ঝাড় আম গাছ কিনেছি। সার, বিষ, লেবার খরচসহ এখন পর্যন্ত ৮৫ হাজার টাকা খরচ করেছি। মুকুলটা এসেছে কিন্তু খুব হালকা। এতে আম কম হবে। কি হবে না হবে তা নিয়ে চিন্তাতে আছি।

তিনি বলেন, মুকুলটা একেবারেই কম। যে তুলনায় খরচ করেছি খেটেছি সে তুলনায় মুকল নাই। আমতো কম হবে এ চিন্তাতে আছি, টাকা উঠবে কিভাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিসিক এলাকার অহিদ নামে অপর এক আম চাষী বলেন, মাঘ মাসের প্রথম দিক থেকে ফাল্গনের মাঝামাঝি পর্যন্ত হচ্ছে মুকুল আমার সময়। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ মুকুল এসেছে সেটি খুবই কম। মুকুল আসার আর তেমন কোন সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। তবে যে পরিমাণ মুকুল এসেছে আমরা এটাই পরিচর্যা করছি। যাতে আমরা ভালো একটা ফলন পাই। বর্তমানে প্রত্যেক বাগানেই চাষীরা মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত।

তিনি আরও বলেন, কীটনাশক থেকে সব কিছুর দর অনেক বেড়েছে। আমরা আশা করব সরকার এ বিষয়টিতে নজর দেবে। তাহলে আমরা আম চাষীরা উপকৃত হবো।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. পলাশ সরকার বলেন, প্রথমত এবার অফ ইয়ার ফলে আমের মুকুল কম হবার কথা, দ্বিতীয়ত অনেক আম গাছ বয়স্ক হয়ে যাওয়ায় গাছের সক্ষমতা কমেছে ফলে মুকুল কম ধরবে ও তৃতীয়ত হটাৎ করে ফেব্রুয়ারি মাসে শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় মুকুল আসার জন্য যে তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় সেটা ছিল না। এই তিন কারণের সমন্বয়ে এবার জেলার আম গাছগুলোতে মুকুল কম এসেছে। এবং এখন পর্যন্ত শতকরা ৬৫ ভাগ গাছে মুকুল এসেছে। তবে বর্তমানে তাপমাত্রা বাড়ায় কিছু মুকুল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আশা করা যায় শেষ পর্যন্ত ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ গাছে মুকুল আসবে।

তিনি আরও বলেন, যে পরিমাণ মুকুল এসেছে এই মুকুলের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে। যাতে মুকুল থেকে ফল আসে। আর সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের হিসাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭ হাজার ৬০৪ হেক্টর জমিতে আম বাগান আছে। গত বছর জেলায় আম উৎপাদন হয়েছিল ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬২৫ মেট্রিক টন।

—-ইউএনবি