April 20, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, February 14th, 2022, 9:56 pm

চাকরির প্রলোভনে ৮০ নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার

আন্তর্জাতিক মানব পাচারকারী চক্রের ৩ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।-

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আকর্ষণীয় পেশায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ৮০ জন নারীকে পাচার করেছে একটি চক্র। এদের মধ্যে বেশি পাচার করা হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এ ছাড়া সৌদি আরব ও ওমানেও বেশকিছু নারীকে পাচার করা হয়েছে। ভালো চাকরির কথা বলে এসব নারীদের বিদেশে পাঠানো হলেও তাদেরকে মূলত বিক্রি করে দেওয়া হতো। পরে জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করা হয় ডিজে পার্টি ও দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে। আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী এ চক্রের মূলহোতা দুবাইয়ে অবস্থানরত চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন (৩৭) ও শিল্পী (৩৫)। তাদের পরিকল্পনায় বাংলাদেশ থেকে কমবয়সী ও সুন্দরী নারীদের টার্গেট করে বিভিন্ন দেশে পাচার করছিল চক্রটি। গত রোববার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর থানা এলাকা থেকে ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। এ সময় তিন ভিকটিম নারীকে উদ্ধার করা হয়। এই তিন নারীকে বিদেশে পাচার করছিল মানবপাচারকারী চক্রটি। গ্রেফতাররা হলেন- আজিজুল হক (৫৬), মোছলেম উদ্দিন ওরফে রফিক (৫০) ও মো. কাউছার (৪৫)। সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উত্তরায় র‌্যাব-১ এর কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক (সিও) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মানবপাচারের মত অপরাধ থেমে নেই। মানবপাচারকারী চক্রের টার্গেট দরিদ্র মানুষ। পাচারকারীরা বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সহজ-সরল মানুষগুদেরকে ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। পাচারকারীদের পাতা জালে জড়িয়ে অবৈধ পথে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছেন এসব মানুষ। যার অধিকাংশই নারী। এসব নারীদের বিদেশে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন পেশায় চাকরির কথা বলা হলেও তাদেরকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। পরে জোরপূর্বক সম্পৃক্ত করা হয় ডিজে পার্টি, দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে। এই পর্যন্ত র‌্যাব-১ আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের বিদেশি নাগরিকসহ অসংখ্য মানবপাচারকারী চক্রের সদস্যকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে। এসব মানবপাচারকারী চক্রের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখে র‌্যাব। সম্প্রতি রাজধানীসহ বেশকিছু এলাকায় মানবপাচারকারী চক্রের তথ্য পাওয়া যায়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার রাতে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল বিমানবন্দর থানাধীন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারী চক্রের সক্রিয় তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি পাসপোর্ট, তিনটি মোবাইল ফোনসেট ও নগদ ২৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। এছাড়াও তিনজন নারী ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়, যোগ করেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন। র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, বর্তমানে দুবাইয়ে অবস্থানরত চট্টগ্রামের মহিউদ্দিন ও শিল্পীর পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে মানবপাচার হচ্ছিল। মহিউদ্দিনের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের যোগসাজশের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া নোয়াখালীর নূর নবী ওরফে রানা (৩৫) ও ঢাকার মনজুর হোসেন (৩৩) এই চক্রের দেশীয় মূলহোতা, যারা এখনো পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার আজিজুল হক এই চক্রের অন্যতম সমন্বয়ক। আজিজুল হকের মাধ্যমে দুবাইয়ে অবস্থানরত মহিউদ্দিন ভিকটিমদের বিদেশে যাওয়ার খরচের টাকা পাঠাতেন। চক্রের পলাতন নারী সদস্য তাহমিনা বেগম (৪৮) ও গ্রেফতার রফিক ও কাউছার কমবয়সী ও সুন্দরী মেয়েদের টার্গেট করতেন। এরপর বিভিন্ন কোম্পানি ও গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাদেরকে বিদেশে পাঠাতে প্রলুব্ধ করতেন। কেউ বিদেশে যেতে রাজী না হলে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতেন তারা। লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন আরও বলেন, এ পর্যন্ত চক্রটি প্রায় ৮০ জন নারীকে এভাবে বিদেশে পাচার করেছে। পাচারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই দুবাইতে পাচার হয়েছেন এবং সৌদি আরব ও ওমানেও কিছু নারী পাচার হয়েছেন। বিদেশে যেতে ইচ্ছুক একাধিক পুরুষের কাছ থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেছে চক্রটি। ভিকটিম নারীদেরকে উদ্ধারে ও অন্যান্য অপরাধীদের গ্রেফতারে র‌্যাব অভিযান অব্যহত রেখেছে। এ ছাড়া গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক। বিদেশে পাঠাতে নারীদের কাছ থেকে কোনো টাকা কেন নেওয়া হতো না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারীদেরকে লোভনীয় ও আকর্ষণীয় পেশায় চাকরির কথা বলা হলেও তাদেরকে বিদেশে বিক্রি করে দেওয়া হতো। এ উদ্দেশ্যে চক্রটি বিদেশে যেতে ইচ্ছুক নারীদের কাছ থেকে টাকা না নিয়ে তাদেরকে উল্টো টাকা দেওয়া হতো। এভাবেই ওইসব নারীদের বিশ্বাস অর্জন করতো চক্রটি।