অনলাইন ডেস্ক :
তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে চার দিন ধরে চলা দাবানাল আরও বিস্তৃত হয়েছে। বহু মানুষ তাদের সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ দাবানলে শনিবার পর্যন্ত অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে বলে গণমাধ্যম সিএনএন তুর্কের বরাতে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দাবানলের কারণে চার দশক ধরে বসবাস করা বাড়ি ছাড়তে হয়েছিল মেহমেত দেমিরের পরিবারকে। শনিবার ফিরে এসে তিনি পেয়েছেন শুধু একটি অগ্নিদগ্ধ একটি ভবন, যার ভেতরে সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে আছে। শুধু বিছানার স্প্রিং, একটি মই, লোহার একটা চেয়ার ও রান্নাঘরের কিছু তৈজসপত্র শনাক্ত করা যাচ্ছিল। দেমিরের বাড়ি যেখানে, আনাথাইলিয়া প্রদেশের সেই মানবগাত জেলায় বুধবার থেকে দাবানল শুরু হয়। দেশটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই সময় থেকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলজুড়ে প্রায় শ’খানেক দাবানল শুরু হয়, বেড়ে ওঠা তামপাত্রা ও প্রবল বাতাসে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৮২ সালে তৈরি করা নিজের বাড়ির ধ্বংসাবশেষের দিকে তাকিয়ে থাকা দেমির রয়টার্সকে বলেন, “পাহাড়ি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া দাবানল হঠাৎ করেই প্রবল হয়ে ওঠে। আমাদের পালিয়ে মানবগাতের কেন্দ্রস্থলের দিকে চলে যেতে হয় আর এখন ফিরে এসে বাড়িটাকে এভাবে পেলাম। “গত ৪০ বছর ধরে এটাই আমাদের একমাত্র সম্বল ছিল। এখন আমার ও স্ত্রীর পরনের কাপড় ছাড়া আমাদের আর কিছু নেই। কিছুই করার নেই। এরকম সময়েই মুখে আর কোনো কথা থাকে না।” মানবগাতের এ এলাকার বাড়িগুলো থেকে কয়েক হাজার বাসিন্দাকের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে দমকলের দুই কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। উপগ্রহ থেকে নেওয়া ছবিতে দেখা গেছে, আনথাইলিয়া ও মেইসিন প্রদেশের দাবানল থেকে ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া দেড়শ কিলোমিটার দূরে সাইপ্রাস দ্বীপ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। তপ্ত গ্রীষ্মের সময় তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলে দাবানল দেখা গেলেও এবারের আগুন অনেক বড় অংশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে। শনিবার এজিয়ান সাগরের উপকূলীয় অবকাশযাপন শহর বোদরুমে নতুন আরেকটি দাবানল শুরু হলে কিছু আবাসিক এলাকা ও হোটেলে থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। আবাসিক এলাকায় পৌঁছানোর আগে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন দমকল কর্মীরা। তুরস্কের কৃষি ও বন মন্ত্রী বেকির পাকদেমিরলি জানিয়েছেন, গত চার দিনে ৯৮টি দাবানল শুরু হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে ৮৮টিকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। দেশটির উপকূলীয় প্রদেশ আদানা, ওসমানিয়ে, আনথাইলিয়া, মেইসিন ও পশ্চিম উপকূলীয় প্রদেশ মুগলায় দাবানল অব্যাহত আছে। আগামী কয়েকদিন এসব অঞ্চলে তামপাত্র আরও চার থেকে আট সেলসিয়াস বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে চলতি সপ্তাহে আনথাইলিয়ায় তামপাত্রা ৪৩ থেকে ৪৭ সেলিসিয়াসে উঠতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিজেপ তায়িপ এরদোয়ান শনিবার মানবগাতের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত সব বাড়ি পুনর্নির্মাণের ও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। প্রতিবেশী আজারবাইজান, রাশিয়া, ইউক্রেইন ও ইরান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও দমকল কর্মী পাঠিয়ে সহায়তা করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২