জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ (ঈশ্বরগঞ্জ)
সুস্থ সবল চারা উৎপাদন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে পলিনেট হাউস। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারী বৃষ্টিপাত প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে নিরাপদ শাক-সবজি ও চারা উৎপাদন করা সম্ভব। স্বল্প খরচে বালাই মুক্ত পরিবেশে শাক-সবজি ও ফলজ বনজ চারা উৎপাদনে পলিনেট হাউস কৃষিতে আধুনিক প্রযুক্তির নতুন সংযোজন।
ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় ঈশ্বরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের সফল উদ্যোক্তা মহরম আলীর বনরাজ নার্সারীর ১০শতক জমিতে পলিনেট হাউস তৈরি করেছে।
সরেজমিন দত্তপাড়া গেলে চাষী মহরম আলী জানান, পলিনেট হাউসে তাড়াতাড়ি বীজের অঙ্কুরোদগম হয়। চারা সুস্থ সবল হয়। পোকামাকড়ের আক্রমণ হয় না। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না। শুধু জৈব সারের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়। এতে চারা গুলো সতেজ ও সুন্দর হয়। সুস্থ সুন্দর চারার প্রতি ক্রেতারাও আকৃষ্ট হয় বেশি। অল্প সময়ে চাহিদা মত চারা সরবরাহ করা যায়। সারা বছর ব্যাপী স্বল্প ও উচ্চমূল্যের সবজি ও ফলজ বনজ চারা উৎপাদন করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নুসরাত জামান জানান, উন্নতমানের ষ্টীলের ফ্রেম মোটা পলিথিন দিয়ে আচ্ছাদিত থাকায় সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। অতিবৃষ্টি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ফসলের ক্ষতি হয় না। আধুনিক প্রযুক্তির পলিনেট হাউজ চারা উৎপাদন ও দুর্যোগ থেকে ফসল সুরক্ষায় বিশেষ অবদান রাখছে। পলিনেট হাউজে চারা পরিচর্যার সকল প্রকার উপকরণ বিদ্যমান রয়েছে। মোটর দিয়ে ফোয়ারার মত চারার উপর পানি ছিটিয়ে দেওয়া হয়। এতে চারা গুলো সতেজ থাকে। এবং তাপমাত্রা থাকে নিয়ন্ত্রণে। এই আধুনিক পদ্ধতির আবাদের মাধ্যমে একজন চাষী অনায়াসে এলাকার চাহিদা মিটিয়ে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন।
চাষি মহরম আলী জানান, চলতি মাসে তার পলিনেট হাউজে রক মেলন, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, রঙ্গিন ফুলকপি, বাঁধাকপি, রঙ্গিন তরমুজ, পেঁপে, মরিচ, পাতি লাউ, মিষ্টি লাউ, গ্লাডিওলাস ফুল সহ প্রায় ৩০হাজার চারা উৎপাদন করেছেন। এই ৩০হাজার চারা উৎপাদন করতে বিভিন্ন উপকরণ ও শ্রমিক মজুরি সহ খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা। ৩০হাজার চারা সাড়ে চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা বিক্রি হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, পলিনেট হাউস ছাড়াও তার (৩ একর) ৩০কাঠা জমিতে রয়েছে ফলস ও বনজ নার্সারি বাগান। বাগানে এলাকার ১৫থেকে ২০জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে। প্রতিদিন তার নার্সারি থেকে হাজার হাজার চারা দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি হয়ে থাকে। তার বাগানে আম, জাম, কাঁঠাল, নারিকেল, করসল, সফেদা, শরিফা, থিনফল, জয়তুন, বেল, কদবেল, কুল, আপেল, কমলা, ফুল সহ প্রায় পাঁচ শতাধিক জাতের চারা রয়েছে। পলিনেট হাউজ স্থাপনের পূর্বে অনেক চারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণে বিনষ্ট হত। এখন পলিনেট হাউজে চারা উৎপাদন করায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণের শিকার হতে হয় না। দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার চারা বিক্রি করে থাকেন বলে তিনি জানান। শ্রমিক মজুরি বিদ্যুৎ পানি সার সহ অন্যান্য ব্যয় মিটিয়ে অর্জিত আয় দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া আর সংসারের খরচ চালিয়েও আর্থিকভাবে তিনি এখন স্বাবলম্বী।##
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি