উপযুক্ত বালু মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় পদ্মা-মেঘনা-ডাকাতিয়া নদী বেষ্টিত চাঁদপুরে তরমুজের চাষ হয় না। ফলে জেলার তরমুজের চাহিদা মেটাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ভোলার চরফেশন, সুবর্নচর এবং পটুয়াখালী ও বরিশালের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই ট্রলারে করে আসছে প্রচুর তরমুজ।
গরমে ও বিশেষ করে মাহে রমজানে রসালো এ ফল নিয়ে সে সব প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ টি বড় বড় স্টীল বডির ট্রলার চাঁদপুর শহরের ১০ নম্বর চৌধুরিঘাটে আসে। প্রতি ট্রলারে থাকে ১০-১২ হাজার পিচ বিভিন্ন সাইজের তরমুজ।
প্রতিদিন প্রায় ৯০ হাজার পিচ তরমুজ আমদানি হয় এ ঘাটে। প্রতিটি তরমুজের গড় মুল্য ১০০ টাকা পিচ হিসেবে দৈনিক প্রায় নয় লক্ষ টাকার তরমুজ আসে। সে হিসেবে রোজার শুরু থেকে গত ১৮ দিনে কমপক্ষে ১৬ কোটি ২০ লাখ টাকার তরমুজের ব্যবসা হয়েছে এখানে।
সরেজমিনে দেখা গেছে যখনই এসব ট্রলার ঘাটে আসে তখনই প্রায় শতাধিক শ্রমিক হই-হুল্লুর করে তরমুজ আনলোড করতে দৌঁড়ে আসে ট্রলারে। ঘাটের পাশে ১০ থেকে ১২ টি আড়তে নিয়ে সাজিয়ে রাখে তরমুজ। আবার পরিত্যক্ত তরমুজ নিতে অতিদরিদ্র ও টোকাইরাও ঘুর ঘুর করে ট্রলারের পাশে।
এখানের আড়ৎ থেকে তরমুজ আবার জেলার মতলব , কচুয়া , কালিয়াপাড়া ও শাহরাস্তি ও বিভিন্ন স্থানে ট্রাক বা পিকআপেও পাঠানো হয়। গত কয়দিন ঘুরে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
প্রবীণ ব্যবসায়ী জাকির লস্কর ইউএনবিকে বলেন, ‘তরমুজের সিজন হবায় শুরু হয়েছে , আরো তরমুজ আইবো।’ গতবারের চেয়ে এবার তরমুজের দাম খুব বেশি ছিলো রোজার শুরুর দিকে। কারণ তেলের দাম বেশি, মজুরি বেশি, ভাড়াও বেশি, সারের দামও বেশি হওয়ায় দামও বেশি ছিল।
গত ৭-৮ দিন বৃষ্টি ও আবহাওয়া শীতল হওয়ায় মানুষের কাছে তরমুজের চাহিদা অনেকটা কমে যায় ।
জেলা শহরে আসা যেকোন পর্যটক বা আগন্তুকেরই চোখে পড়বে শহরের আনাচে কানাচে এবং সড়কের পাশের ভ্যাগগুলোতে থরে থরে সাজানো তরমুজের দৃশ্য। দামও কিছুটা সস্তা। হর্কাস মার্কেটের সামনে ব্যস্ত সড়কে পিকআপে করে এক যুবক দাঁড়িয়ে চিৎকার করে হাক ডাক দিয়ে তরমুজ বিক্রি করছে ১৫০- ২০০টাকা পিচ- যা আগে কখনো দেখা যায়নি বলে জানান স্থানীয় দোকানদাররা।
খুচরা ব্যবসায়ী ইয়াছিন গাজী, আল আমীন, সবুজ, স্বপন মিয়া, মোহাম্মদ হোসেন জানান, প্রতি পিস ছোট তরমুজ ১২০-১৩০ টাকা, মাঝারি ১৫০-২০০, আর বড় তরমুজ ৩০০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১৫ দিন আগেও এ সবের দাম ছিলো প্রায় দ্বিগুন।
এমনটাই দেখা গেল শহরের হকার্স মাকেট, পাল বাজার, নতুনবাজার, বড় স্টেশন, বিপনীবাগ বাজার, বাস স্টেশন এলাকা, ওয়ারলেস বাজার, বাবুরহাট, মহামায়া, পুরানবাজার, এলাকায়।
সদরের লালপুর গ্রামের শাহজাহান মিজি ও সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকজন কৃষক ইউএনবি কে জানান, ‘আমরা তরমুজ চাষ করি না, কারণ ফল ভালো হয় না। এটা পচনশীল ফল। লাভও হয় না। পোষায়ও না।’ একই অবস্থা জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও।
জানতে চাইলে চাঁদপুর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের কৃষিবিদ মোবারক হোসেন ও সদ্য সাবেক প্রবীণ কৃষিবিদ নরেশ দাশ জানান, চাঁদপুরে তরমুজের চাষ হয় না। কয়েক বছর আগে কচুয়া ও আশপাশ এলাকায় সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তরমুজ চাষের। কিন্তু সে সব উদ্যোগ র্ব্যথ হয়েছে। ‘আসলে এখানকার মাটি ও আবহাওয়া তরমুজ চাষের উপযোগী নয়।’
তারা দু-জন আরো বলেন, ‘তরমুজের জন্য যে বালু মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া দরকার, তা চাঁদপুরে নেই। হাইমচর উপজেলার চরে বালুমাটিতে কিছু কিছু তরমুজ চাষ হতে পারে। কিন্তু সেখানকার কৃষকরা তরমুজ চাষের দিকে ঝুঁকছে না। বরং তারা দিনে-রাতে-ভোরে ইলিশের পোনা জাটকাসহ অন্যান্য গুড়া মাছ ধরায় বেশি ব্যস্ত থাকে। কারণ, জাটকায় বা ওইসব গুড়া মাছে বেশি টাকা আয় হয় তাদের।
সরকারিভাবে কৃষকদেরকে তরমুজ চাষে উদ্যোগী বা উৎসাহিত করা প্রয়োজন বলে মনে করেন জেলার সচেতনমহল।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি