November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Wednesday, January 19th, 2022, 9:31 pm

চাহিদা ও জোগানের সঙ্কটে মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজগুলো ৩ গুণ বেশি ভাড়া নিচ্ছে

ফাইল ছবি

অনলাইন ডেস্ক :

ভাড়া নৈরাজ্যের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যগামী উড়োজাহাজগুলো যাত্রীর পকেট কাটছে। মূলত অতি মুনাফার জন্য উড়োজাহাজগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কোনোভাবেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। বরং দেশি-বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। ফলে প্রবাসী, শ্রমজীবী, বিদেশগামী যাত্রী, ওমরাহ যাত্রী, রিক্রুটিং এজেন্সি, ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটরসহ সবাই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কার তুলনায় বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিমানের ভাড়া কয়েক গুণ বেশি নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক ২৩ ঘণ্টার জার্নিতে যেখানে ভাড়া লাগছে মাত্র ৬৫ হাজার টাকা, সেখানে ঢাকা থেকে ৬ ঘণ্টার জার্নি রিয়াদে যেতে ৮০ হাজার থেকে ৯০ হাজার টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। মূলত এয়ারলাইনসগুলো তাদের ইচ্ছামতো অতিরিক্ত ভাড়া যাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে আকাশপথে ভাড়ার নৈরাজ্য চলছে। যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে উড়োজাহাজগুলো অতি মুনাফার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। গত বছরের অক্টোবর থেকে অতিরিক্ত ভাড়ার বৃদ্ধির দৌরাত্ম্য শুরু হলেও চলতি জানুয়ারিতে তা সব রেকর্ড ভেঙেছে। আড়াই মাস আগে যেখানে সৌদি আরবের জেদ্দা, রিয়াদ, দাম্মাম, মদিনা, আরব আমিরাতের দুবাই, কাতার, ওমান, কুয়েতসহ অন্যান্য রুটে ইকোনমি ক্লাসের একমুখী ভাড়া ছিল সর্বোচ্চ ২৫-৩০ হাজার টাকা, জানুয়ারিতে ওই টিকিটের দাম তিন-চার গুণ বেড়ে লাখ টাকা পেরিয়ে গেছে। তারপরও চাইলেই টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না। ট্রাভেল এজেন্টগুলোর কাছে আগামী মার্চ পর্যন্ত সৌদি আরবের টিকিট নেই। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের রুটগুলোতে পর্যাপ্ত ফ্লাইট না থাকার সুযোগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এয়ারলাইনসগুলো নিজেদের মতো করে টিকিটের জমাজমাট বাণিজ্য করছে। ওই সিন্ডিকেটে ঢুকে গেছে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনসও। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস মধ্যপ্রাচ্যের যাত্রীদের ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বহন করে। স্বাভাবিক সময়ে রিয়াদ, জেদ্দা, মাসকাট ও দুবাই রুটে ইকোনমি ক্লাসের একমুখী ভাড়া ছিল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এখন তা ১ লাখ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। ১০ জানুয়ারি ঢাকা থেকে দুবাইয়ে ওয়ান ওয়ে সৌদি এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার টাকা, জাজিরা এয়ারলাইনসের ভাড়া ছিল ৮৫ হাজার টাকা। ওই গন্তব্যে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইনসের ভাড়া ৯৩ হাজার টাকা, এমিরেটস ও ইতিহাদ এয়ারওয়েজের ৯৮ হাজার ৮০০ টাকা। ওমানের মাসকাটে আগে একমুখী ভাড়া ছিল ৩৫ হাজার, বর্তমানে সব এয়ারলাইনস ৭২ হাজার টাকা নিচ্ছে। অতীতেও সুযোগ বুঝে এয়ারলাইন্সগুলো অনেক বার এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রায় প্রতিদিনই আকাশপথের টিকিটের দাম বাড়ছে। সিট নেই, চাহিদা বেশি এমন অজুহাত দেখিয়ে যাত্রীদের পকেট কাটা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন অভিবাসী ব্যয় বেড়েছে, অন্যদিকে দেশের অ্যাভিয়েশন খাতে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য দেখা দিয়েছে। উড়োজাহাজ সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনাকালীন বিভিন্ন নিয়মকানুন পরিপালন করতে গিয়ে উড়োজাহাজের অপারেশন ব্যয় বাড়ায় ভাড়া বাড়ছে। তার মধ্যে করোনাবিষয়ক স্বাস্থ্যসেবা দিতে হচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতনার জন্য সিট খালি রেখে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। তাছাড়া বেড়েছে জেট ফুয়েলের দামও। ফলে টিকিটের দাম বেড়েছে।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে সৌদি আরবে ওমরাহ হজের জন্য যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। পাশাপাশি সৌদি আরব ও দুবাইয়ে জনশক্তি রপ্তানিও বেড়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির আগে যতো সংখ্যক ফ্লাইট পরিচালিত হতো এখন তার চেয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কমে গেছে। আর কোনো কোনো এয়ারলাইনসের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে গুটিকয়েক এজেন্সি সিন্ডিকেট করে যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট ছাড়াই ফ্লাইটের আসন ব্লক করে রাখছে। এভাবেই উড়োজাহাজের টিকিটের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।
এদিকে এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি মনছুর আহমেদ কালাম জানান, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিমান ভাড়া তিন গুণের বেশি বেড়েছে। যাত্রী পরিবহনে দৈনিক দরকার সাড়ে ৫ হাজার আসন। তার বিপরীতে এখন সব এয়ারলাইনস মিলে আসন আছে সাড়ে ৩ হাজার। ফলে চাহিদা ও জোগানের সংকটকে কাজে লাগানোর অনৈতিক প্রতিযোগিতা চলছে। এয়ারলাইনসগুলো সিন্ডিকেট করে টিকিট ব্লক করে রাখছে। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হচ্ছে না। বর্তমানে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সৌদি আরব ও ইউএই ভিসা দেয়া বাড়িয়েছে। ওমানসহ আরো কয়েকটি দেশে ভিজিট ভিসা দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া বর্তমানে করোনার নিষেধাজ্ঞার কারণে যেসব প্রবাসীরা দেশে ফিরতে পারেনি করোনা কমে আসায় তারা দেশে ফিরছে। আবার অনেক প্রবাসী কর্মস্থলে ফিরতে চাচ্ছে। অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তারা বাড়তি দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছে।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, উড়োজাহাজগুলোর ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি দুঃখজনক। যদিও কমার্শিয়াল ইস্যুতে বেবিচকের হস্তক্ষেপ করার তেমন সুযোগ নেই। তারপরও বেবিচক এয়ারলাইনসগুলোকে ডেকে ভাড়া কমানোর নির্দেশ দিয়েছে। কারণ ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ আশপাশের কোনো দেশের ভাড়া বাড়েনি।
এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন জানান, অত্যধিক ভাড়া দিয়ে এদেশের প্রবাসী কর্মীদের যাওয়া সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভাড়া লিমিট করে নিয়ে আসতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সিভিল অ্যাভিয়েশন সব এয়ারলাইনসকে নিয়ে বসেছে, যাতে করে ভাড়ার একটা লিমিট থাকে। ভাড়া যাতে অসহনীয় পর্যায়ে না যায় সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী জানান, মধ্যপ্রাচ্যের ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি আটাব জানিয়েছে। ফ্লাইটের ভাড়ার ব্যাপারে সরকারও সংবেদনশীল। সরকার চায় যেসব কর্মী প্রবাসে যাবে তারা যেন কম ভাড়ায় যেতে পারে। এটা নিয়ে মন্ত্রণালয়েও মিটিং করা হয়েছে। ভাড়া সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সিভিল অ্যাভিয়েশনকেও অনুরোধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকেও এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।