এম. মছব্বির আলী, মৌলভীবাজার:
১২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে দেশের চা-বাগানগুলোতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয় গত ৭ দিন আগে থেকে। তবে পুরোদমে কর্মবিরতির আজ দ্বিতীয় দিন। এতোদিন ধরে অন্যান্য চা-বাগানে কর্মবিরতিসহ ধর্মঘট কর্মসূচি পালিত হয়ে আসলেও ১৬ আগস্ট মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কালিটি চা-বাগানে ভুখা মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। এসময় বাগানের ৫৩৭ জন স্থায়ী শ্রমিকসহ প্রায় সহস্রাধিক শ্রমিক একত্রিত হয়ে ভুখা মিছিল নিয়ে কুলাউড়ার গাজীপুর বাজারে এসে রাস্তা অবরোধ করেন। এসময় রাস্তার বিভিন্ন পাশে যানজটের সৃষ্টি হয়। এদিকে, চা-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে চলমান সমস্যা সমাধানে আজ মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে শ্রীমঙ্গল শ্রম দপ্তর কার্যালয়ে বাংলাদেশ শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে চা-শ্রমিক নেতাদের আলোচনা শুরু হয়েছে।
কালিটি চা-বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সম্পাদক উত্তম কালোয়ার বলেন, ‘শ্রমিকরা এমনিতেই সামান্য মজুরি পান। অন্যদিকে নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছেই। তাহলে একবার ভেবে দেখুন, আমাদের মতো শ্রমিকদের কী অবস্থা হতে পারে? ঘরে চাল-ডাল-তেল-নুন নেই। উপোষ দিন কাটাতে হচ্ছে। এখন তো দুই হালি ডিমের দামও ১২০ টাকা। অথচ আমাদের মজুরি নিয়ে বাগান কর্তৃপক্ষ বার বার সময়ক্ষেপণ করছে।’ ‘আন্দোলনের আজ ষষ্ঠ দিন চলছে। মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ৪ দিন ধরে ২ ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। কিন্তু মালিকপক্ষ থেকে এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা দুই বছর আগ থেকে দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু ১৯ মাস পার হয়ে গেলেও মালিকপক্ষ মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে কার্যত কোন উদ্যোগ নেননি। তারা এই ব্যাপারে গড়িমসি করছেন। তারা মাত্র ১৪ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে মাত্র ১৪ টাকা দিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’, বলেন তিনি।
বাগান পঞ্চায়েতের আহবায়ক কমিটির সাবেক সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস অভিযোগ করে বলেন, ‘বাগানে দীর্ঘদিন ধরে নানা সমস্যা চলে আসছে। বেশিরভাগ শ্রমিক জরাজীর্ণ কাঁচা ঘরে বাস করেন। এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। আমরা কোনো উপায় না পেয়ে আজ সকল শ্রমিক মিলে ভুখা মিছিল করেছি।’
মিছিলে অংশ নেওয়া চা-শ্রমিক দয়াল অলমিক ও গৌরি অলমিক বলেন, ‘আমরা ৪ দিন ধরে কর্মবিরতি পালন করছি। কিন্তু কেউ আমাদের ডাকে সাড়া দেয়নি এমনকি কোন আশ্বাসও দেয়নি। আমরা এত কষ্ট করে কাজ করি, কিন্তু আমাদের ন্যায্য মজুরি দেওয়া হয় না। চাল-ডাল-তেল-নুনসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ আছে, অসুখ হলে চিকিৎসা করাতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মজুরি বাড়েনি কেন বাড়েনা।
বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল জানান, ‘আমাদের শ্রমিকরা কী কঠিন অবস্থায় আছে, সেটি সরকার ও মালিকপক্ষকে অবশ্যই দেখতে হবে। চা–বাগানের শ্রমিকদের খাদ্যের অভাব, ভালো চিকিৎসার অভাব, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার অভাব। ঘরে ঘরে শ্রমিকদের কষ্ট। আমরা এর একটি ভালো সমাধান চাই। ডিজিটাল বাংলাদেশে আমরা আর দাসত্বের জীবন কাটাতে চাই না।’ ‘আমরা এখন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনা করছি। মিটিংয়ের পরেই বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিভাগীয় শ্রম দপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাহিদুর রহমান জানান, ‘মহাপরিচালক শ্রীমঙ্গলে এসে প্রথমে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। পরে চা-বাগান মালিকদের সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে।’
বাংলাদেশীয় চা-সংসদ সিলেট ব্রাঞ্চের চেয়ারম্যান জি এম শিবলী মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্রীমঙ্গলে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেছেন। সিদ্ধান্ত কি হয়েছে সেটা এখনো জানা যায়নি। মজুরি বৃদ্ধির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা চলমান প্রক্রিয়া। আলোচনার মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটা পরবর্তীতে জানানো হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি