জেলা প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ (গজারিয়া):
ছিলো হার্টে সমস্যা সমস্যা। তীব্র বুক ব্যথা নিয়ে কয়েকদিন অফিস করার পর ছুটি চেয়েও ছুটি পাননি মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এক অফিস সহায়ক। ছুটি না দিয়ে তাকে অপমান অপদস্থ করা হয়। এদিকে বুধবার (৪ আগস্ট) অসুস্থ শরীর নিয়ে অফিসে যাওয়ার পথে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।
নিহত কর্মচারীর নাম মিজানুর রহমান (৪৪)। সে গজারিয়া উপজেলার ইমামপুর ইউনিয়নের বেরু মোল্লাকান্দি গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে। সে মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
খবর নিয়ে জানা যায়, ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত মিজান তিন সন্তানের জনক। আট বছর বয়সী ছেলে মামুন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ের মধ্যে মীমের বয়স ছয় ও সাবিহার বয়স তিন বছর। গত প্রায় ১৬ বছর ধরে তিনি মুন্সীগঞ্জ চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গজারিয়া আমলী আদালতে অফিস সহায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাজমিন আক্তার ছুটিতে থাকায় বর্তমানে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এই কোর্টের বিচারকার্য পরিচালনা করেছিলেন। সম্প্রতি মিজানের হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি বুক ব্যথায় ভুগছিলেন। গত রবিবার থেকে বুকে তীব্র ব্যাথা অনুভব করায় তিনি একাধিকবার ছুটি চাইলেও তাকে ছুটি না দিয়ে উল্টো ভৎসনা করা হয়। এদিকে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টার দিকে অফিসে যাওয়ার পথে রাস্তায় তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নিহতের স্ত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা বলেন, আমার স্বামী গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। গত পরশুদিন থেকে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমি তাকে ছুটি আনার জন্য বলি। অসুস্থতার কারণে তিনি গতকাল ( মঙ্গলবার) অফিসে যেতে কিছুটা দেরি করেন। এ কারণে তাকে অফিসের বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এখানেই শেষ নয় স্যার তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে ৮ তলা থেকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেওয়ার কথা বলে। চামড়া ছিলে লবণ লাগিয়ে দেওয়া হবে বলা হয়। অসুস্থ হলেও ছুটি দেওয়া হবে না জানিয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে অফিস করতে হবে বলে তাকে জানানো হয়। আজকে আমার স্বামী অফিসে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে রাস্তায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
নিহতের বড় ভাই আলী আহম্মদ বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের হার্টের সমস্যা আছে। চলতি সপ্তাহের রবিবার থেকে তিনি বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি দুইদিন অফিস করার পর মঙ্গলবার তিনি ডাক্তার দেখানোর জন্য ছুটি চান। তবে কাজের চাপ থাকার কারণে তাকে ছুটি দেওয়া যাবে না বলে জানানো হয়। চিকিৎসা করলে আমার ভাই হয়তো বেঁচে থাকত। সিনিয়র কর্মকর্তাদের অমানবিক আচরণ আমার ভাইকে অকালে চলে যেতে হলো।
বিষয়টি সম্পর্কে টঙ্গীবাড়ী থানা আমলী আদালতের বেঞ্চ সহকারী রুবেল ইসলাম বলেন,’ এ ঘটনায় আজ সকাল দশটা থেকে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করছে। আমরা কথাবার্তা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি