কুড়িগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাওয়ার পথে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে ঐতিহাসিক চিলমারী নৌবন্দর। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো এই নৌবন্দর থেকে পণ্য নিয়ে ভারতের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ভ্যাসেল (নৌযান)।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় চিলমারী নৌবন্দরের রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল নৌ পয়েন্ট থেকে সান আবিদ-১ নামে একটি বাংলাদেশি নৌযান ঝুট পণ্য নিয়ে ভারতের ধুবড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছে।
স্বাধীনতার পর এই প্রথম চিলমারী নৌবন্দর থেকে বাংলাদেশি নৌ পথে পণ্য ভারতে রপ্তানি করা হলো।
রপ্তানির প্রথম চালান হিসেবে ২৭ টন ঝুট পণ্য নিয়ে লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের শান আবিদ-১ নামের একটি নৌযান চিলমারী নৌ বন্দর থেকে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি নৌ বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। শেরপুর তুলার মিল নামক রপ্তানিকারী প্রতিষ্ঠান নৌ পথে এই ঝুট পণ্য রপ্তানি করল।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৭ সালে চিলমারী সফরে এসে এই নৌবন্দর চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর একই বছর চিলমারী নৌবন্দরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান। চিলমারী নৌবন্দরের উন্নয়নের জন্য প্রায় ৩’শ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছর থেকে ভারতের ধুবড়ি ট্রানজিট ব্যবহার করে ভুটান থেকে ক্রাস্টন পাথর ভ্যাসেলে করে প্রায় ছয় মাস আগে থেকে আমদানি করছে বাংলাদেশ। প্রতিমাসে গড়ে ৩০টি ভ্যাসেলে করে প্রায় সাড়ে চার হাজার ক্রাস্টন পাথর আমদানি করা হয়ে থাকে।
এই বন্দর পূর্ণাঙ্গ রূপ পেলে ভারতের সেভেন সিস্টার খ্যাত অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা রাজ্যসহ ভুটান, নেপালের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রপ্তানি সুযোগ বাড়বে। এতে করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে ঐতিহাসিক চিলমারী নৌবন্দর।
স্থানীয় বাসিন্দা আকাশ মিয়া বলেন, ‘এই বন্দর ফির (আবার) চালু হওয়ায় খুশি হামরা (আমরা)। হামরা এলা (এই) নৌবন্দরে কাম করি খাবার পামো (পাবো)। হামার এলাকার মধ্যে আর অভাব থাকবার নয়। ’
নৌ শ্রমিক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ায় আমরা সবাই খুশি। তবে নদীতে পানি কম থাকায় সময় বেশি লাগছে। ধুবড়ি যেতে আমাদের ৭-৮ ঘণ্টা লাগে। নদীর গভীরতার জন্য খনন করা গেলে আমাদের সময় ও অর্থ কম লাগবে। ’
চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত আলী-বীরবিক্রম বলেন, ‘আমি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হলাম। দেশ ভাগের পর ঐতিহাসিক চিলমারী নৌবন্দরটি বন্ধ হয়ে যায়। আজ আমার জীবদ্দশায় আবারও আমদানি-রপ্তানি শুরু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারই বাস্তবায়ন হলো আজ। এখন দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন করা দরকার চিলমারী নৌবন্দরের।’
লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবিবুর মমিন বলেন, ‘ভারত থেকে আমদানি পূর্বে শুরু হলেও প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি কার্যকম শুরু করতে পারায় খুশি আমরা।’ আসামের সঙ্গে নৌ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় ভবিষ্যতে রড-সিমেন্টসহ বিভিন্ন রপ্তানি উপযোগী পণ্য আমদানি-রপ্তানি করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।
রাজস্ব কর্মকর্তা তাপস কুমার সাহা বলেন, চিলমারী নৌ বন্দরের অবকাঠামো উন্নয়ন করা গেলে আমদানি-রপ্তানি আরও বেগবান হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে চিলমারী নৌ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
বাংলাদেশে চিংড়ির রফতানি পরিমাণ কমছে ধারাবাহিকভাবে
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি