অনলাইন ডেস্ক :
চীনে সরকারের কঠোর কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের তীব্রতা বেড়েছে। দেশটির বৃহত্তম শহর সাংহাইতে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। আরও বিভিন্ন শহরে রাজপথে নামতে শুরু করেছে মানুষ। সোমবার (২৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। এক দশক আগে চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শি জিনপিং। তার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে দেশটির মূল ভূখ-ে এমন বিক্ষোভ নজিরবিহীন। চীনে প্রথম কোভিড শনাক্ত হওয়ার তিন বছর পরও সরকারের কঠোর করোনাবিধি মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। সম্প্রতি দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত শহর উরুমকিতে একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় লকডাউনের বিধিনিষেধকে দায়ী করেন স্থানীয়রা। মূলত ওই ঘটনা থেকেই বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটে। দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে রাজপথে নেমে সরকারের কোভিড নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে শুরু করে বিপুল সংখ্যক মানুষ। বিবিসি জানিয়েছে, হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সাংহাই শহরের রাস্তায় নেমে আসে। একপর্যায়ে সেখানে লোকজনকে জোর করে পুলিশের গাড়িতে তোলা শুরু হয়। রাজধানী বেইজিং ও নানজিংয়েও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে শামিল হয়েছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সাংহাইতে বিক্ষোভকারীদের প্রকাশ্যে চীনা প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট পার্টিকে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা গেছে। অনেকে ফাঁকা সাদা ব্যানার নিয়ে বিক্ষোভে যোগ দেন। উরুমকির মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কারও হাতে ছিল মোমবাতি, কেউ হাতে তুলে নেন ফুল। সাংহাইতে প্রতিবাদ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের একজন শন জিয়াও। রয়টার্সের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি। কারণ আমি আমার দেশকে ভালোবাসি, কিন্তু সরকারকে না। আমি স্বাধীনভাবে বাইরে যেতে চাই, কিন্তু সেটা পারছি না। আমাদের কোভিড নীতি একটি খেলা। এটি বিজ্ঞান বা বাস্তবতার ওপর ভিত্তি করে নয়।’ সাংহাইয়ের একজন বিক্ষোভকারী বিবিসিকে বলেছেন, রাস্তায় বিক্ষোভ দেখে তিনি চমকে গেছেন এবং কিছুটা উত্তেজিত বোধ করেছেন। চীনে এত বড় মাপের ভিন্নমতের প্রকাশ তিনি এই প্রথম দেখেছেন বলে মন্তব্য করেন। একজন নারী বিক্ষোভকারী বিবিসিকে জানান, তিনি পুলিশ অফিসারদের জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, তারা এই বিক্ষোভ সম্পর্কে কী মনে করেন, জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তার মন্তব্য ছিল, ‘আপনার মতোই।’ একজন প্রতিবাদকারী বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, ঘটনাস্থলে থাকা তার এক বন্ধুকে পুলিশ মারধর করেছে। অন্য দুজনের চোখে গোলমরিচের গুঁড়ো ছিটিয়ে দিয়েছে। চীনে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বা স্লোগান দেওয়ার ঘটনা বিরল। দেশটির আইন অনুযায়ী, সরকার ও প্রেসিডেন্টকে নিয়ে সরাসরি সমালোচনাকারীদের কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কর্তৃপক্ষ হয়তো কঠোর জিরো কোভিড নীতির প্রতি মানুষের ক্ষোভের মাত্রা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছে। সম্প্রতি এই নীতি থেকে পিছু না হটার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
আরও পড়ুন
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি
গাজায় গত একদিনে নিহত ৫২