টানা ২৫ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ বইছে। এপ্রিলের শুরুতে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকলেও গত ১০ দিন ধরে তীব্র থেকে অতি তীব্র রূপ নিয়েছে। এর মধ্যেই গতকাল মধ্যরাতে জেলায় ঝড়ো বৃষ্টি হয়। কিন্তু এতেও কমেনি তাপমাত্রা। বরং বৃষ্টির পর বেড়ে গিয়েছে ২ থেকে ৪ ডিগ্রি।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকালে চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর বাতাসের আর্দ্রতা ১৪ শতাংশ।
এছাড়া গতকাল চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্র ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। সেসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২১ শতাংশ।
এদিকে, দিনের আলো ফোটার পর থেকে বেলা যত বাড়তে থাকে সূর্যের চোখ রাঙানিও তত বাড়ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময় পার করছে। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠান্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষ।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাস্তাঘাটে জনচলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। জরুরি প্রয়োজনে ও জীবন-জীবিকার তাগিদে অনেককে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেই বের হতে হচ্ছে। আর রাস্তায় বের হলেই প্রচণ্ড গরমের তাপ অনুভূত হচ্ছে। কয়েক জায়গায় সড়কের পিচ গলে গিয়েছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম জানান, বৃষ্টির পর ভেবেছিলাম তাপমাত্রা কমবে। কিন্তু তা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে কড়া রোদের কারণে বের হওয়া যাচ্ছে না।
বেসরকারি চাকরিজীবী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সকালে যখন অফিসে আসছি। তখন থেকেই প্রচুর গরম লাগছে। সারাদিন অফিসে থাকায় কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।
ব্যাটারিচালিত পাখিভ্যান চালক আরমান মিয়া বলেন, সারাদিনই শুয়ে-বসে দিন পার করছি। সন্ধ্যায় কিছুটা যাত্রী পাচ্ছি। এভাবে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়ছে।
এর আগে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিটে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয় এবং দমকা হাওয়া বয়ে যায়। এই ঝড়-বৃষ্টি প্রায় এক ঘণ্টা স্থায়ী হয়। এ সময় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১ দশমিক ৬ মিলিমিটার।
বৃষ্টির আগে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ বৃষ্টির পর এ জেলার তাপমাত্রা আরও দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, এপ্রিলের শুরু থেকেই মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ থাকলে সেটা গত কয়েকদিন একটানা তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। আর এ কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত আবহাওয়া সর্তকতা জারি (হিট এলার্ট) রেখেছে। বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আর যশোরেও একই তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আগামী এক সপ্তাহ এই তাপমাত্রা আরও বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে এবার তাপমাত্রা সব রেকর্ড ভেঙে দেবে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, আবহাওয়ার সর্তকতা মেনে চলতে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে জেলাব্যাপী তথ্য অফিসের মাধ্যমে মাইকিং করে নানা নির্দেশনা প্রচার করা হচ্ছে।
—–ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি