November 18, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Friday, March 8th, 2024, 2:50 pm

চুয়াডাঙ্গায় সিসার অবৈধ কারখানা, হুমকির মুখে পরিবেশ-জনজীবন

চুয়াডাঙ্গায় অল্প সময়ে গড়ে উঠেছে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির অবৈধ কারাখানা। কারখানাটিতে রাতের আঁধারে আগুন জ্বালিয়ে সিসা আলাদা করা হয়। সিসার আগুনের বিষাক্ত ধোঁয়া পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর ফেলছে বিরূপ প্রভাব।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দোস্ত গ্রাম ও উক্ত গ্রামের আঞ্চলিক সড়কের পাশে প্রায় মাসখানেক আগে উক্ত গ্রামের এরশাদ নামের এক ব্যক্তির জমি ভাড়া নিয়ে বগুড়া জেলার শাহীন এই সিসা কারখানা গড়ে তুলেছেন। এর আগে এই কারখানা ছিল ঢাকার আশপাশ এলাকায়। প্রশাসনের অভিযানে ওই এলাকা এই এলাকায় কারখানাটি আনা হয়েছে।

সরোজমিনে এই প্রতিবেদক দেখতে পান, কারখানার ভেতর প্রায় ১৫-২০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। কেউ ব্যাটারি ভাঙছেন, কেউ বা আবার ভাঙা ব্যাটারির প্লেট এক জায়গায় স্তুপ করছেন। এসব প্লেটের স্তূপের পাশে রয়েছে আগুন ধরিয়ে সিসা বের করার জন্য কড়াই। সারাদিন চলে ট্রাকে মাল তোলা-নামানো আর ব্যাটারি ভাঙার কাজ। আর রাত হলেই শুরু হয় আগুন ধরিয়ে এই প্লেটগুলো পুড়িয়ে এটা থেকে সিসা তৈরি।

এই কারখানার মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাকে না পাওয়া গেলেও শ্রমিকদের প্রধান (সর্দার) গাইবান্ধার আব্দুল লতিফ বলেন, ‘বগুড়ার শাহীন এই কারখানার মালিক। মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে এখানে এসেছি। এখানে আমরা পুরনো ব্যাটারি দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে নিয়ে আসি। তারপর ব্যাটারি ভেঙে প্রসেস করে পুরনো ব্যাটারি সংগ্রহ করে পুড়িয়ে সিসা বের করি।’

দোস্ত আমতলা গ্রামের কামরুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের মাঠের মধ্যে বেশ কয়েকদিন আগে একটি সিসা তৈরির কারখানা হয়েছে। এতে করে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং সঙ্গে এলাকার মানুষের শারিরীক ক্ষতির ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

স্থানীয় গ্রামের রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের মাঠে টিন আর চাটাই এর বেড়া দিয়ে ওরা কি যেন করে। সারাদিন এখানে ট্রাক আসে যায়, প্রতিদিন গভীর রাতে প্রচুর আগুন জ্বলতে দেখি। তখন কেমন জানি ঝাঁঝালো গন্ধ আসে।’

একই গ্রামের মোহাম্মদ দ্বীন ইসলাম বলেন, ওই মাঠেই আমার চাষ। এরা প্রায় একমাস আগে এখানে এসে ব্যাটারি ভাঙার কাজ শুরু করেছে। রাতে আগুনও জ্বালায়। যখন আগুন জ্বালায় তখন চোখ-মুখ জ্বলে। মাঠের গাছগুলোর পাতা দিনদিন লাল হয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের ইন্সপেক্টর নরেশ চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারব না। তবে আপনার কাছ থেকে শুনলাম, আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত অভিযান পরিচালনা করব।’

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. আওলিয়ার রহমান বলেন, ব্যাটারির বর্জ্য পুড়িয়ে সিসা তৈরি করলে তা আশপাশে থাকা মানুষের শরীরে পয়জনিং (রক্তকণিকা ও মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতি করা) সৃষ্টি করে। এর ফলে মানসিক বিকৃতি, রক্তশূন্যতা ও মস্তিষ্কের ক্ষতিসাধন হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিল না। যেহেতু জানতে পেরেছি, এই কারখানার বিরুদ্ধে খুব দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

—–ইউএনবি