November 17, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Tuesday, January 11th, 2022, 8:55 pm

চুয়াডাঙ্গায় কমেছে খেজুর গুড়ের উৎপাদন

জেলা প্রতিনিধি:

চুয়াডাঙ্গার খেজুরের গুড় ও নলেন পাটালির সুখ্যাতি দেশজুড়ে। এই গুড় স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। জেলাবাসীর দাবি, বাংলাদেশে খাঁটি খেজুর গুড় কেউ যদি পেতে হলে জেলা চুয়াডাঙ্গাতে আসতে হবে। তবে গাছিদের অভিযোগ, খেজুর গাছ কেটে ইটভাটায় পোড়ানো হচ্ছে। এ কারণে গুড়ের উৎপাদন কমে গেছে। পৌষ মাসের বিকালে গাছিরা সব কাজ শেষে রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে খেজুর গাছে ওঠেন। এরপর ছোট ছোট মাটির ভাড় ঝুলিয়ে রাখেন তারা। পরদিন সকালে রস সংগ্রহের পর তৈরি করা হয় খেজুরের গুড়। শুধু গুড় না, রস দিয়ে পাটালিও তৈরি করা হয়। প্রতি কেজি গুড় বিক্রি হয় ১৫০-১৭০ টাকায় এবং পাটালি ১৯০-২০০ টাকা ও গুড়ের ভাড় বিক্রি হয় ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। গ্রাম থেকে খেজুরের গুড় কিনে শহরের হাঁট-বাজারে বিক্রি করেন অনেক পাইকার। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা চুয়াডাঙ্গায় এসে খেজুর গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। শীত এলেই ব্যাপকভাবে জমে ওঠে চুয়াডাঙ্গা জেলার ঐতিহ্যবাহী সরোজগঞ্জ বাজারের খেজুর গুড়ের হাট। ভোরের আলো ফুটতেই সরোজগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে গুড়ের ভাড় নিয়ে হাজির হন গাছিরা। ঢাকা, পাবনা, সাভার, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাইররা আসেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যাপারিদের পদচারণায় সপ্তাহের দুই দিন শুক্র ও সোমবার মুখর হয়ে ওঠে হাট চত্বর। শীতের তিন মাস এ হাট বেশ জমজমাট থাকে। গুড় কেনার পর মাটির হাড়ি সারি সারি সাজিয়ে তোলা হয় ট্রাকে। এরপর চলে যায় দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে। গুড় কিনতে আসা পাইকাররা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর খেজুর গুড়ের দাম বেড়েছে। তবে আমদানির তুলনায় চাহিদা বেশি হলে সব জিনিসেরই দাম বাড়ে। খেজুর গুড়ের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম নয়। গাছিদের অভিযোগ, ইটভাটা মালিকরা ইট পোড়াতে খেজুর গাছ ব্যবহার করছেন। ফলে খেজুর গাছ ক্রমেই উজাড় হচ্ছে। তাই আগের মতো আর খেজুর গুড় উৎপাদন হচ্ছে না। স্থানীয় প্রশাসন যদি ইটভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানো বন্ধ ও গাছ কাটা বন্ধে একটু নজর দেয়, তাহলে গুড়ের হাট আরও জমে উঠবে। তারা জানান, শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গায় খেজুর গুড় তৈরির ধুম পড়ে। গাছিরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রস সংগ্রহ, জ¦াল দেওয়া ও গুড় তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। তবে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করা খুব কষ্টের কাজ। এজন্য অনেকে এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছেন। সদর উপজেলার বেলগাছি গ্রামের গাছি খাইরুল ইসলাম বলেন, গ্রামের গাছিরা প্রতিদিন দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত গাছ কেটে মাটির ভাড় বাঁধার কাজ করি। একটি গাছে এক ভাড় রস দিয়ে দেড় কেজি ভালো গুড় তৈরি হয়। গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার পর চুলায় দুই ঘণ্টা জাল দিয়ে গুড় তৈরি করতে হয়। গাড়াবাড়িয়া গ্রামের গুড় বিক্রেতা মফিজ মিয়া জানান, গ্রামের অনেক অসাধু গাছি রসের সঙ্গে চিনি মেশানোয় চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্য খেজুর গুড়ের স্বাদ হারিয়ে যাচ্ছে। চিনিমিশ্রিত গুড়-পাটালি চকচক করে। গুড়ের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে পাটালি তৈরি করলে সেটা খুব শক্ত হয়। আসল গুড় ও পাটালি চকচক করবে না। খাঁটি পাটালি কালচে লাল রঙের হবে। ঢাকা খেকে আসা পাইকার খোরশেদ আলী জানান, দিন দিন খেজুর গুড়ের চাহিদা বাড়ছে। চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা থেকে তিন ট্রাক খেজুর গুড় কিনেছেন। ভালো গুড় হওয়ায় দাম একটু বেশি হলেও কিনে খুশি তিনি। সাধারণ গুড় বিক্রেতারা বলছেন, বাইরের জেলার পাইকারি বিক্রেতারা গুড় কিনতে এসে যেন হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো উচিত। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় দুই লাখ ৫০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। প্রতি বছর দুই হাজার ৫০০ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদন হচ্ছে। একজন গাছি প্রতিটি গাছ থেকে এক মৌসুমে অন্তত ১০ কেজি গুড় পান। চলতি মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার খেজুর গুড় বিক্রি হবে।