ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রশাসন, অপসারণের সুপারিশ চেয়ে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা
জেলা প্রতিনিধি, মৌলভীবাজার :
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বক্সের বিরুদ্ধে ৭ ইউপি সদস্য কর্তৃক আনা অনাস্থা প্রস্তাবের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর এখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন। এ নিয়ে অভিযোগ করা ওই ৭ ইউপি সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে। বর্তমানে সাত ইউপি সদস্য ইউনিয়ন পরিষদে নিয়মিত যাচ্ছেন না। যারকারণে ইউনিয়নে কোন মাসিক উন্নয়ন সভা হচ্ছে না এবং সভার রেজুলেশন না হওয়াতে উপজেলা থেকে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য কোন অর্থ ছাড় দেয়া হচ্ছে না। এতে ইউনিয়নের লোকজন সরকারের উন্নয়ন কাজ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের বিরুদ্ধে সাত ইউপি সদস্যদের করা অভিযোগের তদন্ত করা হয় গতবছরের নভেম্বর মাসে। ২৮ নভেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ মৌলভীবাজারের উপ-পরিচালক মল্লিকা দে স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছিল। ওই সময় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে চেয়ারম্যানকে অপসারণের সুপারিশও করা হয়। কিন্তু এরপর প্রায় ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এখনো কোন আইনী ব্যবস্থা না নেওয়াতে অভিযোগকারী সাত ইউপি সদস্যসহ ইউনিয়নের সচেতন নাগরিকদের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
এদিকে সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ বাণিজ্য ও নির্বাচিত সাত ইউপি সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের বিরুদ্ধে গতবছরের ১৬ আগস্ট এক সভার আয়োজন করেন হাজীপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান (১) নূর আহমদ চৌধুরী বুলবুল, প্যানেল চেয়ারম্যান (২) আব্দুল মজিদ, প্যানেল চেয়ারম্যান (৩) সেলিনা আক্তার, সদস্য শাইস্তা মিয়া, আব্দুল মুনিম, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান রুমেল ও সেলিনা আক্তার। ওই সভায় ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করে ২৮ আগস্ট মৌলভীবাজারের সাবেক জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট খাদিজা তাহিরাকে তদন্তপূর্বক বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি সরেজমিন তদন্ত করে চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত বছরের ২৮ নভেম্বর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন জেলা প্রশাসকের কাছে। তদন্ত কর্মকর্তা ওই প্রতিবেদনে চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্সকে অপসারণের সুপারিশও করেছেন। কিন্তু অদ্যাবদি ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি জেলা প্রশাসন।
ভুক্তভোগী ইউপি সদস্যরা বলেন, বিভিন্ন বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে আমরা ৭ ইউপি সদস্য চেয়ারম্যানের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম। পরবর্তীতে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগের সত্যতা পায় তদন্ত কমিটি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আজও অবধি কোন আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য আমরা সুন্দর একটি সমাধান চাই প্রশাসনের কাছে।
এ বিষয়ে হাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বক্স বলেন, অভিযোগের বিষয়ে আমি জেলা প্রশাসনকে জবাব দিয়েছি। উনারা বলেছেন, সুন্দরভাবে পরিষদ পরিচালনা করতে। মূলত, পরিষদের কর বাবদ ১ লক্ষ ৩৯ হাজার টাকা তহবিলে জমা না দিয়ে ওই সাত সদস্যরা সেটি আত্মসাৎ করেছেন। আমি টাকা আত্মসাতের কারণ জানতে চাইলে তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ করে আমাকে হুয়রানি করেছেন। উন্নয়ন কাজ বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিআর-কাবিখা প্রকল্প ছাড়া বাকি উন্নয়ন কাজগুলো চলমান রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ শিমুল আলী বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে টিআর কাবিখা প্রকল্পে ১ম ও ২য় পর্যায় মিলে প্রায় ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে হাজীপুর ইউনিয়নের উন্নয়নের জন্য। কিন্তু পরিষদ থেকে কোন রেজুলেশন না পাওয়াতে কোন বরাদ্দ ছাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। যারকারণে এই দুই প্রকল্পে ইউনিয়নের উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছেনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয়ের অভিযোগে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা হয়েছে সেটা জেনেছি। কিন্তু বর্তমানে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দ্বন্ধের কারণে উন্নয়ন কাজ বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে এটা সত্য। তবে খুব শীঘ্রই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে সুন্দর সমাধান হবে বলে আশা করছি।
মৌলভীবাজারের বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন, আমি জেলা প্রশাসক হিসেবে নতুন যোগদান করেছি। অভিযোগ বা তদন্তের বিষয়ে বিস্তারিত আমার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিস্তারিত খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি