সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বুধবার পর্যন্ত ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বন্যায় তলিয়ে গেছে বহু পাকা রাস্তাঘাট, প্লাবিত হয়েছে হাজারও ঘরবাড়ি, দুই শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শতাধিক মৎস্য খামার।
গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ।
প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ফের বন্যায় ছাতকে ১৩টি ইউপি ও একটি পৌরসভাসহ মোট তিন শতাধিক গ্রাম, দুইশতাধিক প্রাথমিক ও শতাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসায় বন্যার পানি ঢুকেছে।
বুধবার দুপুর থেকে ছাতক উপজেলার সঙ্গে সারাদেশে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে শতাধিক মানুষ অবস্থান নিয়েছেন।
বেরাজপুর, নোয়াপাড়া, আলমপুর, বিলপার, দশঘর, কৃঞ্চনগর, আনন্দনগর, বাগইন, লক্ষীপুর, গোবিন্দনগর, মোহনপুর, তকিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ ও ছাতক তিন কিলোমিটার সড়ক এলাকায় তিন ফুট ও চার ফুট পর্যন্ত বন্যার পানি জমেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে ইসলামপুর, চরমহল্লা, ভাতগাও, সিংচাপইড়, উত্তরখুরমা, গোবিন্দগঞ্জ, সৈদেরগাও, ছৈলাআফজলাবাদ, কালারুকা, নোয়ারাই, জাউয়াবাজার, দোলারবাজারসহ ১৩টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ছাতক-দোয়ারা, ছাতক-সুনামগঞ্জ, ছাতক জাউয়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সরাসরি সড়ক যোগাযোগ অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ি-রতনপুর সড়ক, ছনবাড়ি-গাংপাড়-নোয়াকোট সড়ক, কালারুকা ইউনিয়নরে মুক্তিরগাঁও সড়ক, বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমেরতল-ধারণ সড়ক, বুড়াইর গাও-আলমপুর-দাহারগাও-আলমপুর, তাজপুর-নুরুল্লাহপুর, গোবিন্দনগর-দশঘর, পালপুর-সিংচাপইড় সড়ক, বোকারভাঙ্গা-মানিকগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার বিভিন্ন সড়কের একাধিক অংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
শতাধিক স্টোন ক্রাশার মিল, পোল্ট্রি ফার্ম ও মৎস্য খামারে বন্যার পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শাক-সবজির বাগানেও পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
বেরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মানিক মিয়া জানান, তার বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে মূল্যবান কাগজপত্র ও বই পানিতে ডুবে গেছে। নৌকা দিয়ে বিদ্যালয়ের কাগজপত্র ওপরে তোলা হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা-মেঘনা স্টেশন সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সরকারিভাবে বানভাসি মানুষের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বানভাসি আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন ইউএনও।
গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য চারটি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গতদের উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনা খাবার বিতরণ নিয়মিত বিতরণ করা হচ্ছে। ছাতক সদর পোস্ট অফিসে পানি ঢুকেছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যার্তদের জন্য শহরের চারটি বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যে এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্গত পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম ব্যাহত রয়েছে।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি