April 27, 2024

The New Nation | Bangla Version

Bangladesh’s oldest English daily newspaper bangla online version

Monday, August 1st, 2022, 10:13 pm

জনবল নিয়োগ না দিয়েই নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ

ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জনবল নিয়োগ না করেই নতুন কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫২টি আর ৪৬টিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তার মধ্যে ৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক ছাড়াই চলছে। আর ১০ জনের নিচে অধ্যাপক রয়েছে এমন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৪টি। আর চলতি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে নতুন ৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সেগুলো হচ্ছে- কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে ওসব প্রতিষ্ঠানে উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কোনো শিক্ষকই নিয়োগ দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো জনবল কাঠামোরও অনুমোদন দেয়া হয়নি। অথচ ইতোমধ্যে ওসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় প্রয়োজনীয় অধ্যাপকের সঙ্কট রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকরা যেতে চায় না। তবে বিদ্যমান শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে অধ্যাপকের সঙ্কট কাটনো সম্ভব। বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রয়োজনীয় ল্যাব-গবেষণাগারসহ অন্যান্য অনুষঙ্গ রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। আর বিভাগ অনুমোদন বা অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরুর অনুমোদন দেয়ার পরই শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগের জন্য অনুমতি দেয়া হবে।
সূত্র জানায়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫টি অনুষদের অধীন ৫ বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৬ জন শিক্ষক রয়েছে। তার মধ্যে মাত্র একজন সহকারী অধ্যাপক আর ২৫ জনই প্রভাষক। ওই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো সহযোগী অধ্যাপক বা অধ্যাপক পদপর্যাদার শিক্ষক নেই। শুধু রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, দেশের আরো ৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে কোনো শিক্ষক নেই। সেগুলো হচ্ছে- রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। তাছাড়া বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র একজন অধ্যাপক দিয়ে চলছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ জন অধ্যাপক রয়েছে। আর পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিতে ১০ জনের কম অধ্যাপক রয়েছে। রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিগত ২০১৫ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কোনো অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই। আর ২০১১ সালে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েও এখনো কোনো অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক নেই।
সূত্র আরো জানায়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ছাত্রছাত্রী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কোনো জনবল কাঠামোর অনুমোদনই দেয়া হয়নি। তবে সম্প্রতি জনবল কাঠামো বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে অনুমোদন করেছে। তার অনুমোদন চেয়ে শিগগিরই ইউজিসিতে দাখিল করা হবে। আর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ শিক্ষাবর্ষে ৩ বিভাগে ৯০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি করা হবে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়েল পক্ষ থেকে জনবল কাঠামোর অনুমোদন চেয়ে ইউজিসিতে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শিক্ষক না থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট উপাচার্যরা জানান, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিভিন্ন নতুন পদের জন্য জনবল কাঠামো পাস করাতে কিছুটা বিলম্ব হয়। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক পদে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আসতে চায় না। কারণ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অধ্যাপকদের চাহিদা অনুযায়ী হয়তো সুযোগ সুবিধা দিতে পারে না। দক্ষ, অভিজ্ঞ শিক্ষক না থাকা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য সঙ্কট হলেও তা মানিয়ে নেয়া হয়েছে। আগামীতে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক হবেন।
অন্যদিকে শিক্ষাবিদদের মতে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো বিভাগে সিনিয়র শিক্ষক থাকা উচিত। অধ্যাপক না থাকলে অন্তত সহযোগী বা সহকারী অধ্যাপক নিয়েও কাজ চালিয়ে নেয়া যেতে পারে। অনেক সময় অধ্যাপকরা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে চায় না। তবে অধ্যাপকের পদই যদি সৃষ্টি না হয় তবে তা কাম্য নয়। নতুন পদ সৃষ্টির অনুমোদন দেয়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের দায়িত্ব। পদ সৃষ্টির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ইউজিসির কাছে আবেদন করতে হবে। নতুন পদ সৃষ্টি না হলে তার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইউজিসির।
এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) ড. দিল আফরোজা বেগম জানান, নতুন তিন বিশ্ববিদ্যালয়ে চলতি শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে।