জনবল সংকটের কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিট (আইসিইউ) এবং হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) পরিষেবা প্রায় নয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে করে জেলায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে কারণ ইতোমধ্যেই দেশে করোনার চতুর্থ ঢেউ শুরু হয়েছে।
জেলার বাসিন্দারা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটগুলো খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন।
সূত্র মতে, ২০২০ সালে ২১ মার্চ ‘সাজেদা ফাউন্ডেশন’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি চুক্তি করে যে তারা আইসিইউ এবং এইচডিইউ রোগীদের নিজস্ব জনবল এবং ভেন্টিলেটরসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দিয়ে দুই মাসের জন্য চিকিৎসা দেবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ফাউন্ডেশন পরে হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় ছয়টি আইসিইউ শয্যা, আটটি এইচডিইউ শয্যা, দুটি ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি স্থাপন করে।
ফাউন্ডেশনের ৪৪ জন সদস্যের একটি দল এর মধ্যে ১০ জন চিকিৎসক, ১৪ জন আইসিইউ স্টাফ নার্স, সাত জন ওয়ার্ডবয়, একজন করে ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও এক্স-রে টেকনোলজিস্ট এবং অন্যান্যরা মিলে একই বছর ২৬ জুলাই থেকে বিশেষ করে করোনার সময় রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার গত বছরের ৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিটগুলোর উদ্বোধন করলেও ফাউন্ডেশনটি অনেক আগেই রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিল।
চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দার ছেলুন ৭ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে ইউনিগুলোর উদ্বোধন করেন। তবে এর অনেক আগেই ফাউন্ডেশনটি রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিল।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকল যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা ঠিক থাকলেও জনবল সংকটের কারণে ৯ মাস আইসিইউ বিভাগ এবং এইচডিইউ পরিষেবাটি বন্ধ রয়েছে। কারণ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে ফাউন্ডেশন তাদের জনবল নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছে।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা আমিনু ইসলাম ও আব্দুল কাদের ইউএনবিকে বলেন, গত বছর হাসপাতালে আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিট চালুর খবর পেয়ে তারা খুবই খুশি হয়েছিলেন, কারণ এই জেলায় সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই।
চালুর দুই মাস পর দুটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা আইসিইউও এইচডিইউ ইউনিটগুলো স্থায়ীভাবে চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটের তৎকালীন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. নাফিজ উল্লাহ সানি ইউএনবিকে জানিয়েছে, চুক্তি অনুসারে করোনা মহামারি সময়ে চুয়াডাঙ্গায় সাজেদা ফাউন্ডেশন সরঞ্জাম ও জনবল দিয়ে দুই মাস আইসিইউ এবং এইচডিইউ ইউনিটের সেবা দিয়েছে।
চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় সাজেদা ফাউন্ডেশন আইসিইউ ও এইচডিইউ ইউনিটটির সম্পূর্ণ সেটআপ হাসপাতালগুলোকে দান করে দেয় এবং জনবল চলে যায়।
তিনি জানান, তারা একটি সার্ভে করে দেখেছেনে যে জনবলের স্বল্পতার কারণে ইউনিটগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ব্যয়বহুল ভেন্টিলেটরসহ সরঞ্জামগুলো অব্যবহৃত হয়ে পড়ে থাকায় সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আতাউর রহমান ইউএনবিকে জানান, ফাউন্ডেশন রোগীদের চিকিৎসা ও সরঞ্জাম দান করার সময় তিনি হাসপাতালের দায়িত্বে ছিলেন না।
তিনি জানান, কার্যকরী জনবল নিয়োগ এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না হওয়ায় আইসিইউ বিভাগ থাকলেও তা চালানো সম্ভব নয়। তাই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
ডা. আতাউর বলেন, আমরা বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে ইউনিটগুলো আবারও চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।
—ইউএনবি
আরও পড়ুন
আশুলিয়ায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ২
তিস্তার পানি কমতে থাকলেও বেড়েছে ভাঙন আতঙ্ক
সিরাজগঞ্জে দ্রুত গতিতে বাড়ছে যমুনার পানি